সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

যথেষ্ট হয়েছে, এখন থামতে চান তিনি

১২ স্ত্রী, ১০২ সন্তান আর ৫৭৮ নাতি-নাতনি উগান্ডার মুসার

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৭:৫৫

উগান্ডার মুসার পরিবার

উগান্ডার বুতালেজা জেলার বুগিসা গ্রামের বাসিন্দা মুসা হাসাহিয়া কাসেরা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, পরিবারের সদস্যদের নাম ঠিকমতো মনে রাখতেও পারেন না কাসেরা। একান্নবর্তী এই পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে ক্রমাগত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে তার দুই স্ত্রী ছেড়ে গেছেন। খবর এএফপির।

৬৮ বছর বয়সী কাসেরা জানিয়েছেন, প্রথমে এটা ছিল হাস্যরসের বিষয়। কিন্তু এখন সেসব ঘিরে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিন দিন কমছে শরীরের জোর। বিশাল এই পরিবারের জন্য মাত্র দুই একর জমি। খাদ্য, বস্ত্র ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারিনি বলে দুই স্ত্রী ছেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য তার স্ত্রীরা এখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মেনে চলছেন। কাসেরা বলেন, আমার স্ত্রীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, অবশ্য আমি করিনি। আমি আর সন্তান নিতে চাই না। কারণ, এত বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ থেকে আমার শিক্ষা হয়েছে। সন্তানদের আমি লালন-পালন করতে পারছি না।

পারিবারিক আয়োজনে কাসেরা প্রথম বিয়ে করেন ১৯৭২ সালে। এ সময় তিনি ও তার স্ত্রী দুজনেরই বয়স ছিল ১৭ বছর। এক বছর পর তাদের প্রথম সন্তান হয়। কাসেরা বলেন, যেহেতু আমরা শুধু দুই সহোদর ছিলাম, তাই আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, বংশের সম্প্রসারণে অনেক বেশি সন্তান জন্ম দিতে যেন বেশ কয়েকটি বিয়ে করি।

গবাদিপশু বিক্রেতা ও কসাই হিসেবে সচ্ছ্বল জীবন ছিল কাসেরার। আর অবস্থাসম্পন্ন দেখে গ্রামবাসী তার সঙ্গে তাদের মেয়েদের বিয়ে দিতে চাইতেন। এমনকি তাদের কারো কারো বয়স ছিল ১৮ বছরের কম।

কাসেরার সন্তানদের বয়স ১০ থেকে ৫০ বছর। আর তার সবচেয়ে ছোট স্ত্রীর বয়স ৩৫ বছর। তিনি বলেন, প্রথম আর শেষ সন্তান ছাড়া বাকিদের নাম মনে রাখতে পারেন না। তাদের জন্মের বিস্তারিত জানতে একটি পুরনো নোট বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে কথাগুলো বলছিলেন কাসেরা।

মুসার সন্তানরা উগান্ডার বুগিসা গ্রামের জীর্ণ-শীর্ণ বাড়িতে বসবাস করে। এই বাড়ির লোহার ছাদে মরিচা ধরেছে। কাছাকাছি এলাকায় আরও প্রায় দুই ডজন ঘাসে ছাওয়া মাটির কুঁড়েঘর রয়েছে; যেখানে তার সন্তানরা থাকে।

মুসা তার কয়েকজন স্ত্রীর নামও এখন আর মনে করতে পারেন না। স্ত্রী বা সন্তানদের নাম জানার জন্য ছেলে শাবান মাগিনোর সহায়তা নিতে হয় তাকে। মুসার সন্তানদের মধ্যে যে অল্প কয়েকজন শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন শাবান তাদের একজন। ৩০ বছর বয়সী শাবান একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক; যিনি পরিবারের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনায় সাহায্য করেন।

বিশাল এই পরিবারে ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসা করার জন্য প্রত্যেক মাসে একবার পারিবারিক বৈঠক হয় বলে জানান মুসা। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বুগিসা গ্রামের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার। তিনি বলেন, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মুসা তার ‘সন্তানদের বেশ ভালোভাবে লালনপালন করেছেন’ এবং উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তার সন্তানরা কোনও চুরি অথবা মারামারি করেননি।

স্ত্রীরা কেন তাকে ছেড়ে যাননি, এমন প্রশ্নের জবাবে মুসা বলেন, তারা সবাই আমাকে ভালোবাসে। আপনি দেখছেন, তারা সুখী।

বুগিসার বাসিন্দারা মূলত ধান, কাসাভা, কফির চাষ করেন। গবাদি পশু পালনের জন্য ছোট পরিসরে ফসল চাষাবাদের সাথেও জড়িত তারা। মুসার পরিবারের অনেক সদস্য তাদের প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করে অর্থ উপার্জন অথবা খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কাঠ এবং পানি সংগ্রহ করেন।

আর বাড়িতে যারা থাকেন, তাদের কেউ বসে, খোশগল্প করে কিংবা গাছের ছায়ায় কার্ড খেলে সময় পার করেন। অন্যদিকে, বাড়ির নারীদের মধ্যে কেউ কেউ মাদুর বুনেন কিংবা পরস্পরের মাথার চুলে বিলি কেটে দেন।

দুপুরের মধ্যাহ্নভোজে থাকে স্থানীয় সিদ্ধ কাসাভা। এই খাবার যখন প্রস্তুত হয়ে যায় তখন মুসা কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে আসেন; যেখানে তার দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় এবং পরিবারের সদস্যদের খাবারের জন্য ডাকেন। মুসার ডাকে পরিবারের সদস্যরা খাবার সংগ্রহের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায়।

মুসার তৃতীয় স্ত্রী জেবিনা বলেন, কিন্তু খাবার পর্যাপ্ত নয়। আমরা বাচ্চাদের দিনে একবার কিংবা দু’বার ভালো খাওয়াতে বাধ্য হই। তিনি বলেন, যদি জানতেন যে মুসার আরও স্ত্রী আছে, তাহলে তিনি তাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন না। হতাশ কণ্ঠে জেবিন বলেন, এমনকি আমি এখানে এসে যখন সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম... তারপরও সে চতুর্থ, পঞ্চম বিয়ে করল। সেটি গিয়ে ঠেকল ১২তম বিয়েতে।

উগান্ডায় বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ হয় ১৯৯৫ সালে। তবে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে বহুবিবাহের প্রচলন রয়েছে।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top