সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

তুরস্ক-সিরিয়া রূপ নিয়েছে ধ্বংসপুরীতে

ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প কেড়ে নিল ৫ হাজারের বেশি প্রাণ

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৪:০৫

ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্ক

স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্ক। গোটা দেশ কার্যত ধ্বংসপুরীতে রূপ নিয়েছে। মৃত্যু মিছিল ছাড়িয়েছে ৫ হাজারের গণ্ডি। তুরস্কে পর পর ৩ টি ভয়াবহ ভূমিকম্প ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। দেশজুড়ে চলছে শোকের মাতম। প্রাণহানির সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তার কোনও সীমা পাচ্ছে না বিশ্ব।

সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এ ভূমিকম্প হয়। তুরস্কের গাজিয়ানতেপের কাছে এক জায়গা ছিল ভূমিকম্পের এপিসেন্টার। তাকে কেন্দ্র করে তুরস্ক সিরিয়া সীমান্ত লাগোয়া বিশাল অংশ কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পে।

প্রথম ভূমিকম্পের পর প্রাথমিকভাবে জানা যায় সেদেশে তখন মৃতের সংখ্যা ৩৬০ ছাড়াচ্ছে। এরপর বেলা গড়াতেই ভয়াবহ আকারে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। শেষ পাওয়া খবরে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫০০০ এর অঙ্ক ছাড়িয়ে যায়।

ভূমিকম্পে কোথাও হুড়মুড়িয়ে বাড়ি ভেঙে পড়ে, কোথাও আগুন লাগার ঘটনাও দেখা যায়। এই পরিস্থিতি উঠে আসে সিরিয়া ও তুরস্কের বিভিন্ন জায়গা থেকে। ভূমিকম্পের এই রূপ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা সোশ্যালে উঠে আসে।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রবল ঝাঁকুনিতে বহু ভবন ধসে পড়েছে, সেসব ধ্বংসস্তূপে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। ঘুমের মধ্যে কারো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ভুমিকম্পের ভয়াল থাবা। কর্মীরা ধ্বসংস্তূপের মধ্য থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে চালাচ্ছে জোরালো তৎপরতা। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হচ্ছে। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।

সোমবারের এই ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই ৬০০০ বাড়িঘর ধসে পড়েছে। ২০০র মতো আফটার শক হয়েছে। এখনও ধ্বংসস্তুপের ভেতরে আর্তকান্না শোনা যাচ্ছে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন। মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ভাগ্যজোরে বেঁচে ফেরা সেসব তুর্কি ও সিরীয়রা জানিয়েছেন তাদের ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের গা শিউরে ওঠা বাস্তবতা।

এদিকে, তুরষ্ক ও সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরফে বাড়ানো হয়েছে সাহায্যের হাত। বিশ্বের মোট ৪২ টি দেশ এগিয়ে এসেছে সাহায্যে। পুরনো শত্রুতা ভুলে সাহায্যে এগিয়ে আসে বহুদেশ।

১৯৯৯ সালের পর এটাই তুরস্কে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। সেসময় সাত দশমিক ছয় মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল মারমারায় আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পে সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ মারা যায়। সেই বছরের নভেম্বরে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের শহর দুজসেতে সাত দশমিক দুই মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ওই ঘটনায় মারা যায় ৮৪৫ জন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তুরস্কে ভূমিকম্প হয়। কিন্তু সেগুলো এত বিধ্বংসী ছিল না। তাই মাত্রার দিক থেকে এবারের ভূমিকম্পটি তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী।

তবে শুধু কম্পনের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দেশটিতে থাকা ভবনগুলো কতটা দৃঢ়, সে ব্যাপারটিও প্রভাব ফেলেছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে ভোরে, তখন প্রায় সব মানুষই বাসায় এবং ঘুমে ছিলেন। এ কারণে ভবনধসে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, গাজিয়ানতেপ এলাকাটির বেশির ভাগ ভবনই শুধু ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা খুবই ভঙ্গুর। এই নাজুক ভবন সেখানে বসবাসরত বাসিন্দাদের ভূমিকম্পের আঘাতে আরও ভঙ্গুর করে দিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের আগ্নেয়গিরি এবং ঝুঁকি যোগাযোগ বিভাগের কারমেন সোলানা বলেন, দক্ষিণ তুরস্ক এবং বিশেষ করে সিরিয়ায় অবকাঠামোগুলো বেশির ভাগই ধসে গেছে। এ কারণে আটকে পড়াদের জীবন বাঁচানো এখন অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধারকাজের ওপর। জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪৮ ঘণ্টা পর বেঁচে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কমে যায়।

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top