তালেবানের দুই বছর
বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আফগান নারীরা
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০২৩, ২৩:০০
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দুই বছরে কেমন কাটল আফগানদের জীবন? চলুন সেদিকে একটু দৃষ্টিপাত করি। দ্বিতীয় দফায় তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে আফগানদের জীবন। আতঙ্ক আর হতাশার জাল ছড়িয়ে পরেছে পুরো আফগানজুড়ে।
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল আগের তুলনায় আরো বেশি উদার হবে তারা। নারীদের স্বাধীনতার প্রশ্নে শরিয়া আইন অনুযায়ী পর্দা রক্ষা করে পড়াশোনা ও চাকরির অধিকার থাকবে।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুল দখলে নেওয়ার পর তালেবান প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলে, ‘আমাদের কাঠামোর মধ্যে নারীদের কাজ ও শিক্ষার অধিকারকে গ্রহণ করব। নারীরা আমাদের সমাজের সক্রিয় ভূমিকা নিতে যাচ্ছে।’
কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরো উলটো। এই দুই বছরে দেশটিতে সংকুচিত হয়েছে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার। একের পর এক বিধি-নিষেধে নারীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
এখন অবস্থা এমন যে, ক্ষমতা দখলের পর তালেবান প্রশাসন ১২ বছরের বেশি বয়সি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, চাকরি, এনজিওর কাজ সব কিছুতে বিধিনিষেধ দিয়েছে তালেবান। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। পার্ক কিংবা জিমের মতো জায়গায় তাদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত মাসে আফগানিস্তানের সব পার্লার ও বিউটি সেলুন বন্ধ করেছে তালেবান।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, পারিবারিক নির্যাতন বাড়ছে, জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েদখানার মতো বন্দি জীবন বাড়িয়েছে মানসিক চাপ। হতাশা আর অবসাদে ভুগছেন অনেক নারী।
যদিও তালেবানদের অন্যতম মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের দাবি, নারীদের নিরাপত্তার জন্য এসব করা হচ্ছে। তার মতে, ইসলামি আইন অনুযায়ী তারা নারীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছেন। নারীরা এখন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুলিশ বিভাগ, পাসপোর্ট অফিস, বিমানবন্দরসহ বহু জায়গায় কাজ করছেন।
তবে কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বাস্তব অবস্থা মোটেও তেমন নয়। তালেবান শাসনে একজন নারী কেবল অন্য কোনো নারীর কাছ থেকেই স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন। নারীদের উচ্চশিক্ষায় বাধা দেওয়ার ফলে নারী চিকিৎসক তৈরি অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নারী ডাক্তার-নার্স পাওয়ার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ছে।
কাবুল পতনের বার্ষিকীতে পশ্চিমের হেরাত শহরে তালেবান জমায়েত থেকে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘ইউরোপীয়দের মৃত্যু হোক, পশ্চিমাদের মৃত্যু হোক, আমেরিকানদের মৃত্যু হোক, আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত দীর্ঘজীবী হোক।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।