নিকারাগুয়ার ১০০ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ! কিন্তু কেন...

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৫

ছবি: সংগৃহীত

মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ১০০ কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলো, তার তিন সন্তান, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, নতুন নিষেধাজ্ঞায় নিকারাগুয়ার ১০০ জন স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন। এ বিষয়ে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ওর্তেগা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরোধী রাজনীতিবিদ, সংবাদমাধ্যম, ব্যবসায়ী নেতা ও ক্যাথলিক চার্চদের দমন-পীড়ন করেছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, নিকারাগুয়ার সরকার গুরুতর এবং নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিষয়গুলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। জাতিসংঘ নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের একটি দল গত মার্চ মাসে এ বিষয়ে আলোচনায় বলেছিল।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকারাগুয়া সরকার ২০১৮ সাল থেকে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে আটকের মতো কাজ করেছে। এদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, নিকারাগুয়ান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং নিকারাগুয়ার বিচারব্যবস্থার প্রসিকিউটর ও বিচারকসহ ১০০ জন সদস্য এবং তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব ব্যক্তির মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

নিকারাগুয়ার প্রেক্ষাপটে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেশটির নাগরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হচ্ছে, যারা গণতন্ত্রকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বা জড়িত এবং এই জাতীয় ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ব্যক্তির ওপর বিধিনিষেধ দিল যুক্তরাষ্ট্র।

বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে স্বৈরশাসক অ্যানাসতাসিয়া সোমোজা দিবায়েলের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নিকারাগুয়ার ক্ষমতা দখল করে বামপন্থী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী সান্দিনিস্তা গেরিলা মুভমেন্ট। ওই অভ্যুত্থানে সান্দিনিস্তা গেরিলা মুভমেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন ড্যানিয়েল ওর্তেগা। অভ্যুত্থানের সরাসরি ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি।

তারপর গত ৪৪ বছরের বিভিন্ন সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে ও বাইরে অবস্থান করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে তিনি ক্ষমতায় আসেন এবং এখনও নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্টের পদে আছেন ওর্তেগা।

ক্ষমতা ধরে রাখতে গত ৪৪ বছরের বিভিন্ন সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল, সংবাদমাধ্যম, সিভিল সোসাইটি ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর গুরুতর ও পদ্ধতিগত সহিংসতা চালানো সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগে অভিযুক্ত ড্যানিয়েল ওর্তেগা; আর এক্ষেত্রে ওর্তেগার স্ত্রী ও নিকারাগুয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রোসারিও মুরিলো এবং তাদের দল সান্দিনিস্তা গেরিলা মুভমেন্টের জেষ্ঠ্য নেতারা তাকে সবসময় সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন এবং করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০২১ সালের ৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো দেশটির রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন ওর্তেগা। ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ছিল।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top