গাজার অর্ধেক মানুষই অনাহারে: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:২৪

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ইসরায়েলি সংঘাতের দুই মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ফিলিস্তিনের গাজার অর্ধেক মানুষ অভুক্ত থাকছেন। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। গাজা পরিদর্শনের পর এমনটাই বলেছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক কার্ল স্কাউ। খবর বিবিসি'র।

গত শুক্রবার গাজা পরিদর্শন করেন কার্ল স্কাউ। এরপর সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, এখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। মানুষ অভুক্ত থাকছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তার সামান্যই গাজায় ঢুকতে পারছে।

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার দিকে ইঙ্গিত করে কার্ল বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতোই ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু গাজার পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

চলতি সপ্তাহে ডব্লিউএফপি দলের গাজা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কার্ল আরও বলেন, তাঁরা গুদাম ও বিতরণকেন্দ্রগুলোর সামনে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষকে মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করতে দেখেছেন। সেখানকার দোকানগুলো ছিল শূন্য। আর শৌচাগারের সামনে ছিল দীর্ঘ লাইন। তিনি বলেন, এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই প্রতিদিন খাবার জোটে না।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, হামাসকে নির্মূল করতে এবং ইসরায়েলি বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যেতে হবে। আইডিএফের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেকট গতকাল শনিবার বিবিসিকে বলেছেন, ‘কোনো বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু ও দুর্ভোগ আমাদের কাছে বেদনাদায়ক, তবে আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।’ তাঁর দাবি, গাজা ভূখণ্ডের ভেতরে যতটা সম্ভব অগ্রগতি অর্জন করতে তাঁরা সবকিছুই করছেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইডিএফের চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভিকে সৈন্যদের বলতে দেখ গেছে যে, তারা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করে। কারণ, সন্ত্রাসীদের’ আত্মসমর্পণ করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ছে।

সংঘাত শুরুর পর শুধু মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সীমিত পরিমাণে সাহায্য গাজায় পৌঁছাতে পারছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইসরায়েল থেকে গাজায় প্রবেশের কেরাম শালোম ক্রসিং খুলতে সম্মত হয়েছে। তবে তা শুধু সাহায্য লরি পরিদর্শনের জন্য। এরপর ট্রাকগুলো রাফাহ হয়ে গাজায় প্রবেশ করবে।

গাজার দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনিস শহরের পরিস্থিতিও প্রচণ্ড ভয়াবহ। শহরের একমাত্র অবশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি এবং বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আহমেদ মোগরাবি খাবারের অভাব নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, ‘আমার তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। সে আমার কাছে কিছু মিষ্টি, কিছু আপেল, কিছু ফল চায়। আমি দিতে পারি না। আমি অসহায় বোধ করি। এখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। আছে শুধু ভাত। আপনি বিশ্বাস করতে পারেন? আমরা দিনে একবার, মাত্র একবার খাই!’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই দিনই সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশেও বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটি। অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা এখন ত্রাণসহায়তার ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু। শুধু নিহত শিশুর সংখ্যাই ৭ হাজারের বেশি।আর ইসরায়েল বলেছে, এতে প্রায় ১ হাজার ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top