ক্ষমতার খায়েস থাকলে পদত্যাগ করে দল করে নির্বাচন করুন: মির্জা ফখরুল

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০:০১

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যদি সরকারে থাকার খায়েশ থাকে তাহলে পদত্যাগ করে নির্বাচনে আসুন। ক্ষমতায় বসে সরকার গঠনের কথা চিন্তা করবেন না। নির্বাচন করে সরকার গঠন করুন, না হলে জনগণ মেনে নেবে না। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার, যেখানে যেখানে পরিবর্তন আনা দরকার, পরিবর্তন আনুন। আমরা সংস্কারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু দ্রুত নির্বাচন দিন। আমরা জানি নির্বাচনের কথা বলে ১/১১ তে একটা ঘটনা ঘটেছিল। মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীন খুব ভালো ভালো কথা বলে, সংস্কারের কথা বলে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল। মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনকে চলে যেতে হয়েছে।

সভায় বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, সংস্কারের নাম করে মানুষের অধিকার পিছিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ায় মানুষ অন্য কিছুর গন্ধ পায়। সংস্কার করবে জনগণ ও তাদের প্রতিনিধিরা। নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার দরকার সেটা করে নির্বাচন দিন।
তিনি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি দায়িত্ব নেয়ায় আশস্থ হয়েছিলাম। আমরা আশাবাদী আপনি দ্রুত নির্বাচন দিবেন। যত দ্রত নির্বাচন দিবেন, তত দ্রুত দেশে শান্তি ফিরে আসবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না । স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিলে আওয়ামী লীগ মাথাচারা দিয়ে উঠবে। প্রবলেম শুরু হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেশের মানুষ মেনে নেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা সবাই সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের জন্য গৌরব। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বিশ্বের সমস্ত নেতারা, অর্থনীতিবিদরা, সংস্কারকরা তাকে অনেক সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন। সেজন্য আপনি যখন দায়িত্ব নিয়েছেন আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম এই ভেবে যে আপনি সত্যিকার অর্থে একজন সুবিবেচকের মতো অতিদ্রুত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আমরা এখনো আশাবাদী তিনি অতিদ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিজের দল আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। ৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হলে সিপাহী জনতার আন্দোলনে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে একদলীয় শাসনের অবসান করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনারাও ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিন। জনগণের রায় যদি আপনাদের পক্ষে যায় তাহলে আপনারাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবুও আমরা বলব জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করুন। কারণ এই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গত ১৬ বছরে বিএনপির ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণের বিনিময়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এই সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা অনেক বেশি। আপনাদের ব্যর্থ হলে চলবে না জনগণের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা আপনাদেরই করতে হবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। পতিত স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসরা জেঁকে বসে আছে। দেশকে দ্রুত ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হলে গণতান্ত্রিক সরকারের বিকল্প নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন ভেঙে পড়ছে। মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। প্রশাসনযন্ত্র ঠিকমতো কাজ করছে না। এই অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। এজন্যই বিএনপি দেশের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও নির্ভরতা রক্ষা করতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দাবি করছে।

যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, কেশবপুরের আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, মণিরামপুরের শহীদ ইকবাল, অভয়নগরের ফারাজী মতিয়ার রহমান, চৌগাছার এম এ সালাম, কেশবপুরের আব্দুস সালাম, বাঘারপাড়া বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, চৌগাছার সেলিম রেজা আওলিয়ার, নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক, সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জারুল হক খোকন, যুবদলের এম তমাল আহমেদ, আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top