ফকিরহাটে কৃষকের স্বপ্ন ডুবছে নোনা জলে
বাগেরহাট থেকে | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩৩
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১০টি বিল পূর্ণিমার অতি জোয়ারে ডুবে গেছে। এসব বিলের ধান খেত ডুবে গেছে নদীর লবন পানিতে। উপজেলার খাজুরা বেড়িবাধের ৬ নং ও খড়িবুনিয়ার ২ নং স্লুইস গেট দির্ঘদিনেও সংস্কার না করায় কয়েকশ একর জমির ধান লবন পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান ভুক্তভোগী কৃষকেরা।
স্থানীয় ধান ও মৎস্য চাষিরা জানান, রূপসা নদী হতে একটি খাল ফকিরহাটের বিভিন্ন স্থানের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। খালটি খাজুরা ৬ গেট হয়ে মিনেদার বিল, খড়িবুনিয়া বিল, মাসকাটা বিল, চাকুলী বিল, শ্যামগঞ্জ বিল, ঝিনাইখালী বিল, কুমারখালী বিল ও বিঘা বিলের মধ্য দিয়ে শ্যামবাগাত পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্য শাখাটি পাশ্ববর্তী রামপাল ইউনিয়নের বাইনতলা হয়ে গৌরম্বা এলাকায় গিয়ে মিশেছে। নদী থেকে খালের প্রবেশ মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খাজুরায় ৬ নং স্লুইস গেট নির্মাণ করেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে প্রবল পানির চাপে গেটটি ভেঙ্গে যায়। স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম, মুজাহিদ শেখ, আব্দুর রশিদ, মুকাররাম শেখ, খোকন শেখসহ কয়েক জন জানান, ভেঙে যাওয়া গেট পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক বার দায়সারা মেরামত করলেও স্থায়ী সমাধান করেনি। ফলে ভাঙা গেট থেকে অতি জোয়ারের লবন পানি সরাসরি কৃষকের খেত ও মাছের ঘেরে চলে এসেছে।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাবেক ইউপি সদস্য মো. জালাল উদ্দিন শেখ বিলের ডুবে যাওয়া আধা পাকা ধান বাঁচাতে কয়কজন কৃষক নিয়ে দিন রাত স্যালো মেশিন বসিয়ে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু পানির প্রবল চাপের কাছে সেচ অপ্রতুল হওয়ায় কোন লাভ হচ্ছে না। পাশের বেতাগা ইউনিয়নের মাসকাটা বিলে একই চিত্র দেখা যায়। এভাবে আরও চার পাঁচ দিন ধান ডুবে থাকলে ফসলসহ কৃষি জমির স্থায়ী ক্ষতি হবে বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ গাইন।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোর মধ্যে লখপুর ৯ নং ওয়ার্ড একটি। সেখানকার ইউপি সদস্য মো. শাহীন ফারাজী বলেন, বিরি আঠাশ ধান পেকে গেছে। তোহামনি, বিআর২, বিআর ২ ও বিআর৩ ধান আধাপাকা অবস্থায় আছে। এ মুহুর্তে জোয়ারের লবন পানি প্রবল বেগে উপরের দিকে ধেয়ে আসছে। সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। প্রবল পানির চাপে ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জোয়ারের লবন পানি উঠা বন্ধ করতে হলে ২টি গেটের পাট মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে। তা করা না হলে জোয়ারের লবন পানি উঠা বন্ধ করা যাবে না।
লখপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ গাইন ও সুমন বাকচি বলেন, বেশ কয়েকটি বিলের ধান লবন পানিতে নিমজ্জিত। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। লবন পানি উঠা বন্ধ করতে না পারলে কৃষকরা ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষ্ণা সরকার বলেন, বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছি। তাঁরা চলমান পরিস্থিতিতে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, স্লুইস গেটটি পূণঃনির্মানের জন্য একটি টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদার অচিরেই কাজ শুরু করবেন।
এনএফ৭১/এমএ/২০২২
বিষয়: বাগেরহাট
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।