হত্যা করে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে নুরুজ্জামানকে, দাবি চাচার
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০২২, ০০:২১
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন নুরুজ্জামান। সবাইকে বোঝাতেন, আত্মহত্যা মহাপাপ। যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া নুরুজ্জামানের চাচা আব্দুল হান্নান।
নুরুজ্জামান ময়মনসিংহের গৌরীপুরের চুড়ালি গ্রামের আব্দুল মালেক ও হেলেনা দম্পতির ছেলে। তারা চার ভাই ও তিন বোন। তিনি গত ২০ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে আসছেন। সেখানেই সফুরা আক্তার নামে একজনকে বিয়ে করেন। তিনিও গার্মেন্টস শ্রমিক। তারা দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন।
আব্দুল হান্নান বলেন, ভিডিওটা দেখলেই বোঝা যায় যে তাকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলা হয়েছে। পড়ার পর কিন্তু গাড়ি থেকে কেউ বের হয়নি। এতেই স্পষ্ট যে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এছাড়া, একটা মানুষ লাফ দিলে যেভাবে পড়ে, নুরুজ্জামান সেভাবে পড়েনি। মনে হয়েছে যেন একটি মূর্তি ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার মরদেহ চাই ও হত্যাকারীর বিচার চাই।
মা হেলেনা বেগম বলেন, নুরুজ্জামানের বউ, তার বোন, দুলাভাই ও ছেলেকে নিয়ে নুরুজ্জামানকে মেরে ফেলছে। জমি নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝামেলা ছিল। তাই, আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। আমি বিচার চাই।
নুরুজ্জামানের ভাই আবুল কাশেম বলেন, ১৫ আগস্ট আমার ভাই পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই দিন মধ্যরাতে তাদের বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাই। দরজায় প্রায় আধাঘন্টা ধাক্কাধাক্কি করার পর ভাইয়ের স্ত্রী সফুরা দরজা খোলে।
পরে আমি সফুরা, দুই ভাতিজি, সফুরার বোন ও তার জামাই ফজলুল হক এবং তার ছেলে মোজ্জাম্মেল হককে নিয়ে পদ্মা সেতু এলাকার থানায় যাই। গিয়ে জানতে পারি, ওই গাড়ির চালক ও নুরুজ্জামানের সঙ্গে থাকা ফারুক মিয়াসহ দুজনকে পুলিশ আটক করেছে। পরে এ বিষয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করে।
‘এদিকে, মোজাম্মেলের সঙ্গে থাকা ফারুকের আত্মীয়রা তাকে ছাড়িয়ে আনতে যান। তবে পুলিশ তাকে ছাড়েনি। এসব করতে করতেই রাত হয়ে যায়। পরে ফেরার সময় আমার ভাবি, দুই ভাতিজিকে খোঁজে পাই না। তারা ফারুকের আত্মীয়দের সঙ্গে আমাকে ফেলে রেখেই চলে আসে। এ অবস্থায় আমি ভাবিকে ফোন দিয়ে বলি আমি সবার নামে মামলা করবো। পরে ভাবি ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ভাতিজিকে নিয়ে আমার সঙ্গে আসে।’
তিনি আরও বলেন, জমি নিয়ে ভাবির বোন, দুলাভাই ও তার ছেলে মোজাম্মেলের ঝামেলা চলছিল। ছয় লাখ টাকায় দুই কাঠা জমি আমার ভাই নুরুজ্জামানকে লিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লিখে দেয়নি। এসব নিয়েই তাদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের কারণেই তারা আমার ভাইকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়েছে। আমরা চাই, সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে সফুরা বলেন, নুরুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর করব জিয়ারত করতে যাবে, বিষয়টি আমি জানতাম না। সকালে উঠে আমাকে ঘুমে রেখেই চলে যায়। পরে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। সে আত্মহত্যা করেছে নাকি মারা গেছে, ভিডিওতে আপনারা যা দেখেছেন আমিও তাই দেখেছি।
১৫ আগস্ট ভোরে নুরুজ্জামান ওমর ফারুক নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যান। কিন্তু কবর জিয়ারত ও ফুল দেওয়ার জন্য অনুমতি না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতু দিয়ে ফেরার পথে চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে ঝাঁপ দেন তিনি। এরপর থেকে নিঁখোজ হন নুরুজ্জামান। খবর: জাগো নিউজ।
বিষয়: পদ্মা সেতু হত্যা নুরুজ্জামান
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।