চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ ও গুড় তৈরি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৫০
পারদর্শী গাছিদের নিপুণ হাতের ছোঁয়াতে ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে গাছের পরিচর্যা। সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতি। ফলে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা গাছে গাছে ভাঁড় পেতেছেন সুমিষ্ট স্বাদের রস আহরণ শেষে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার গাছিরা। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী অবহেলিত এ খেজুর গাছগুলোকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলার প্রস্তুতি সেরে গাছ থেকে খেজুরের সুমিষ্ট স্বাদের রস আহরণের প্রস্তুতিতে চুয়াডাঙ্গা'র গাছিরা।
শীতের দিন মানেই গ্রামীণ জনপদের মানুষের মাঝে খেজুর রস, আর রস থেকে তার গুড়ের মৌ মৌ গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটুকু তৃপ্তির তা বলে বোঝানো যাবে না। পাড়ায় পাড়ায় খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। কিছু কিছু গ্রামে রস সংগ্রহ আহরণ শুরু করে গুড় প্রস্তত করা হয়েছে। আর ক'দিন পরই সংগ্রহ করা হবে রস, রস থেকে শুরু হবে পাটালি ও গুড় তৈরির পর্ব। জেলার রস ও গুড়ের সুনাম অর্জন রয়েছেন দেশব্যাপী।
চুয়াডাঙ্গা জেলার কার্পাসডাঙ্গা সীমান্ত ইউনিয়নের কানাঈডাঙ্গা গ্রামের গাছি আকবার আলী মুজিব নগর সড়কের রাস্তার পাশে মাজায় মোটা দড়ি, হাতে কাচি নিয়ে খেজুরের গাছ ঝুড়ার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এসময় তার কাছে গিয়ে এ বছরের কয়টি খেজুর গাছ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলন, নিজের গাছ রয়েছেন ২০টি অন্যের কাছে থেকে নিয়েছি ৩০টি। এবছর মোট ৫০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ কারা হবে। ইতিমধ্যেই গাছের পরিচর্যা শেষের পথে। অন্যের কাছ থেকে ৩০টি গাছ নেওয়ার জন্য প্রতিটি গাছের জন্য ১ কেজি করে মোট ৩০ কেজি গুড় দেওয়া লাগবে। রস সংগ্রহের জন্য গাছের সকল পরিচর্যা শেষের পথে। শীতের এ মৌসুমিতে পুরোদমে চলবে রস সংগ্রহ শেষে গুড় তৈরির প্রস্তুতি। গুড় থেকে তৈরি করা হবে পাটালি। রস থেকে গুড় তৈরির এ পর্ব চলবেন ফ্লাল্গুন মাস অবধি। হেমন্তের প্রথমে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট সরোজগম্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গাছিরা তাদের গুড় নিয়ে আসবেন বাজারে বিক্রি করতে। এসকল গুড়ের হাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের গুড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে গুড় কিনে থাকেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার চারটি উপজেলার মোট ২ লাখ ৪৮ হজার ৯৬০টি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৯৩ হাজর ৪৫০, আলমডাঙ্গায় ৩৫ হাজার ৩১০টি, দামুড়হুদা উপজেলার ৮৩ হাজর ও জীবননগর উপজেলার ৩৬ হাজর ৫০০টি খেজুর গাছ রয়েছে। জেলা থেকে এ বছরে ২ হাজর ৫০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা অর্জনে আশাবাদী। এ জেলার গুড় সুস্বাদু হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেয়ে থাকেন।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের “মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মোঃ মাসুম আব্দুল্লাহ’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গাছিদের গাছ কাটার কাজটি একটি শিল্প। এ জন্য শীত মৌসুমে আসার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ গাছিদের কদর বেড়ে যায় ।এ গাছের রস গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। তিনি আরো বলেন, আমাদের বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ রোপন ও সংরক্ষণের দরকার। কারণ এ গাছটি অন্যান্য গাছের তুলনায় অধিক গুরুত্ব বহন করেন, অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ ভূমিাক পালন করে। তাছাড়া খেজুরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে দেশি চারার পাশাপাশি বিদেশি চারাও রোপন করা প্রয়োজন। তবে বর্তমান দেশের বিভিন্ন স্থানে খেজুরের জন্য বিদেশি গাছ লাগানো হচ্ছে।
এনএফ৭১/আরআর/২০২২
বিষয়: চুয়াডাঙ্গা খেজুর গাছ রস আহরণ গুড় তৈরি
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।