টাঙ্গাইলে জীবিতকে মৃত বানিয়ে বিধবা ভাতা বাতিলের অভিযোগ
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫৪
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জীবিত বিধবাকে মৃত দেখিয়ে তার নামে চালু থাকা বিধবা ভাতা বাতিল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের দিঘরবাইদ গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের স্ত্রী মলিদা বেগম আড়াই বছর আগে যাচাইবাছাই শেষে বিধবা ভাতার কার্ড পান। ইতোপূর্বে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ মাসের তিন হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন।
অভিযোগকারী মলিদার জানান, ভাতা তোলার তিন দিন পর ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের এক সাবেক মহিলা কমিশনার বাড়িতে এসে সমাজসেবা বিভাগের নামে তিন হাজার টাকা আপ্যায়ন খরচ দাবি করেন। মলিদা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই মহিলা কমিশনার উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে তার বিধবা ভাতা বাতিলের হুমকি দেন। পরের মাস থেকেই ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
সমাজ সেবা অফিসে খোঁজ নিতে গেলে স্টাফরা জানান, সার্ভার সমস্যায় নাম মৃত তালিকায় চলে যাওয়ায় ভাতা বাতিল হয়ে গেছে।
সাবেক কমিশনার আবদুল কদ্দুস জানান, সমাজসেবা বিভাগের ভাতা বরাদ্দের ক্ষেত্রে দালালরা সক্রিয়। ইউনিয়ন পরিষদের সুপারিশে কারোর ভাতার ব্যবস্থা হলেও ভাতাভোগীর নিস্তার নেই। একজন সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্যকে মাঠে নামানো হয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে দরিদ্র ও অসহায় ভাতাভোগীর নিকট থেকে নানা উপায়ে টাকা আদায় করে সংশ্লিষ্ট স্টাফরা। অসহায় বিধবা মলিদা বেগম এই প্রতারকচক্রের শিকার।
তিনি আরও জানান, বিধবা মলিদা একজন নিঃস্ব মানুষ। অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে খায়। তাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা কর্তন খুবই অমানবিক কাজ। নানা সুবিধার বিনিময়ে উপজেলা সমাজসেবা বিভাগের স্টাফরা অসহায় ও অসুস্থ মানুষকে বাদ দিয়ে অনেক সময় সুস্থ এবং স্বাভাবিক মানুষকে সরকারি ভাতা পাইয়ে দিয়ে থাকে।
আলোকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান সিদ্দিক জানান, সমাজসেবা বিভাগ স্বচ্ছতার সাথে কাজ না করায় নতুন ভাতা বরাদ্দ পেতে অনেকেই হয়রানির হয়। আবার পুরানো ভাতা কর্তন করার নামে অনিয়ম চলে।
সমাজসেবা অফিসার ফজর আলী জানান, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে মলিদার বিষয়টি তদন্ত করে ভাতা বাতিল অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সার্ভারজনিত ত্রুটি বা অন্য কোনো কারণে এমনটা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইসমাইল হোসেন জানান, মলিদা বেগমের বিধবা ভাতা যাতে পুনরায় চালু হয় সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাতার জন্য কাউকে হয়রানি বা কারো নিকট থেকে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ কেউ করেনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমিন জানান, হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মলিদা বেগম লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সমাজসেবা বিভাগকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।