পাহাড়ে শুরু হলো বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য আয়োজন ‘বৈসাবি’
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫৫

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তিন দিনব্যাপী বিজু-বৈসু-সাংগ্রাই তথা বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। এ উৎসব ঘিরে পাহাড় জুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’।
গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের ‘বিঝু’, ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, তংচঙ্গ্যাদের ‘বিসু’ এবং অহমিয়াদের ‘বিহু’ উৎসব। তবে ত্রিপুরা, মারমা এবং চাকমা এই তিন নৃ-গোষ্ঠীর উৎসবের নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে পাহাড়িদের এই উৎসবের নামকরণ হয়েছে বৈসাবি এবং নববর্ষসহ হয় বৈসাবিন।
এদিন সবেমাত্র পূর্ব আকাশে সূর্য উঠেছে। এরই মধ্যে রাঙ্গামাটির কেরানী পাহাড় এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের তীরে হাজির হন শত-শত পাহাড়ি তরুণ-তরুণী। ঐতিহ্যবাহী পিনন-হাদির পোশাকে তরুণী এবং ধুতি-পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হাতে ফুল, পাতা নিয়ে তরুণরা ছুটে চলছে কাপ্তাই হ্রদের তীরে। তীরে গঙ্গা মায়ের উদ্দেশ্যে ফুল উৎসর্গ করে কলা পত্র করে সেই ফুল পানিতে ভাসিয়ে দেয়। নতুন বছরের জন্য শুভকামনা জানিয়ে গঙ্গা দেবীর নিকট প্রার্থনা করে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।
চলমান উৎসবটি ‘বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু’ নামের সংমিশ্রণে গঠিত ‘বৈসাবি’। এটি ১৪টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব। চাকমারা যাকে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাইং এবং ত্রিপুরারা বৈসুক নামে পালন করে।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সাজসাজ রব পড়েছে পাহাড়ি জনপদে। ঘরবাড়ি সাজানো হচ্ছে বিজু ফুল ও নিমপাতা দিয়ে। প্রতিটি ঘরে পরিবেশন করা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পাজন (কমপক্ষে ২১ পদের সবজির সংমিশ্রণে তৈরি একটি বিশেষ তরকারি), তরমুজ, ঘরে তৈরি পানীয়, মিষ্টান্ন, পায়েস ও নানা খাবার।
আগামী ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হবে উৎসবের মূল দিন- চাকমাদের মূলবিঝু, মারমাদের সাংগ্রাইং আক্যা এবং ত্রিপুরাদের বৈসুকমা। বাংলা নববর্ষ প্রথমদিন ১৪ এপ্রিল পালিত হবে গোজ্যেপোজ্যে (চাকমা), সাংগ্রাইং (মারমা) এবং বিসিকাতাল (ত্রিপুরা) নামে।
এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাইং জলোৎসব, যা এক সপ্তাহব্যাপী চলবে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায়। এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে পাহাড়িদের এ বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ উৎসব।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।