বাবার কোলে চড়ে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে নাইছ খাতুনের অনন্য সাফল্য
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩২
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বহালগাছা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইছ খাতুন ওরফে হাসি নিজের অদম্য মনোবল ও কঠোর পরিশ্রমে অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) অনলাইনে প্রকাশিত ফলাফলে তিনি ৩.০২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। খুশিতে আত্মহারা নাইছ, একইসঙ্গে গর্বিত তার বাবা-মা ও স্বজনরাও।
১৮ বছর ধরে বাবার কোলে চড়ে স্কুল-কলেজে
শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে দুটো পা ও ডান হাত প্রায় নিশ্চল নাইছের সম্বল শুধু বাঁ হাতটি। জন্ম থেকেই এমন পরিস্থিতি হওয়ায় কোনোদিন নিজে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেননি তিনি। তাই ১৮ বছর ধরে বাবার কোলে চড়েই তার স্কুল, কলেজ ও পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত।
তার বাবা নজরুল ইসলাম জানান, “মেয়ের শরীরে শক্তি নেই, কিন্তু মনের জোর অসীম। এক হাত দিয়ে লিখে আজ যে জায়গায় এসেছে—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টি।”
অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্প
২০০১ সালে জন্ম নেওয়া নাইছ খাতুন ৬ বছর বয়সে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর—
এসএসসি (২০১৭): ৩.৫৫
এইচএসসি (২০১৯): ২.৭৫
পরে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ কেন্দ্রে, সেখানেই অর্জন করেন বড় সাফল্য।
নাইছের স্বপ্ন আরও বড়
জন্ম থেকে শারীরিক দুর্বলতা থাকলেও কখনো মন হারাননি নাইছ। নিজের দৃঢ়তা সম্পর্কে তিনি বলেন—
“শরীরে শক্তি নেই—তা বলে মনোবল হারিয়ে ফেললে চলবে না। আমি কারও বোঝা হতে চাই না। লেখাপড়া আমাকে মানুষের ভালোবাসা দিয়েছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে একদিন শিক্ষক হতে চাই।”
অনেক বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলা
বাবা-মা আদর করে তার নাম রেখেছিলেন ‘হাসি’—কারণ জন্ম থেকেই ছিল মুখভরা হাসি। ডাক্তার-কবিরাজ অনেক ঘুরেও সঠিক চিকিৎসা পাননি তারা, তবে সেই সীমাবদ্ধতা আর্থিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও থামিয়ে রাখতে পারেনি নাইছকে।
তার এই অর্জন শুধু পরিবার বা এলাকার নয়—এটি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে শক্ত লড়াই করা সব মানুষের জন্য এক অনন্য উদাহরণ।
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।