ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার কথা জানেন না মা, অপারেশন থিয়েটারে ছেলের খোঁজে
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৫
রাজধানীতে ভূমিকম্পে নিহত সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফির মরদেহ পড়ে আছে হাসপাতালের বেডে। আর আহত মা নুসরাত বেগম রয়েছেন অপারেশন থিয়েটারে। একটানা ছেলের খোঁজ করছেন তিনি, বারবার জিজ্ঞেস করছেন— ‘রাফি কেমন আছে?’ অথচ তিনি জানেনই না, তার স্নেহের সন্তান আর কখনো চোখ মেলে ফিরবেন না এই পৃথিবীতে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার কসাইটুলিতে একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিনজন পথচারী নিহত হন।
নিহতদের একজন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফি। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। রাফির বাবা চাকরি করেন দিনাজপুরে। হলের সিট পেলেও ঢাকায় মা ও বোনের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
রাফির সহপাঠী অপু জানান, সকালে মা নুসরাত বেগমকে সঙ্গে নিয়ে মাংস কেনার জন্য বাজারে গিয়েছিলেন রাফি। বংশালের কসাইতুলির ‘নয়নের মাংসের দোকান’-এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এমন সময় ভূমিকম্প শুরু হলে তীব্র দুলুনিতে পাশের ভবনের রেলিং ভেঙে তাদের ওপর আছড়ে পড়ে।
পরে আশপাশের লোকজন দৌড়ে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় মা-ছেলেকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, রাফির মাথা ও মুখমণ্ডল মারাত্মকভাবে থেঁতলে গেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাফির মা নুসরাত বেগমের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাত লাগায় তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তার অস্ত্রোপচার চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি আশঙ্কামুক্ত হলেও তীব্র মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
অপু বলেন, “খালামণির কাছে এখনো রাফির মৃত্যুর খবরটা বলা হয়নি। ও নিজেও গুরুতর আহত। তবুও বারবার জানতে চাইছেন— রাফি কেমন আছে।”
এদিকে প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদে ইতোমধ্যে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন রাফির একমাত্র বোন। ভাইয়ের নিথর দেহ আর মায়ের যন্ত্রণাময় অবস্থা একসঙ্গে বয়ে নিতে না পেরে বারবার ভেঙে পড়ছেন তিনি।
পুলিশের বংশাল থানার ডিউটি অফিসার জানান, কসাইতুলির ওই পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে ঘটনাস্থলেই দুইজন পথচারী মারা যান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে একজন রাফি। বাকি দু’জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনজনের মরদেহই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, “কসাইতুলিতে বাড়ির অংশবিশেষ বা সানসেট ভেঙে নিচে পড়লে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।”
আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে অনুভূত এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭, যা মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভবন হেলে পড়াসহ নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।