গড়াই খননের বালুতে তলিয়ে গেল কুষ্টিয়ার ৪৬টি ঘরবাড়ি

কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০৫

গড়াই খননের বালুতে তলিয়ে গেল কুষ্টিয়ার ৪৬টি ঘরবাড়ি

গড়াই নদের খনন করা বালুর স্তূপে তলিয়ে গেছে অন্তত ৪৬টি বাড়িঘর। এসব বাড়িঘরে অন্তত ১০০ পরিবার বাস করত। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ সড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন।

এমন ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার বহলা গোবিন্দপুর এলাকায়। দুই সপ্তাহ ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গড়াই নদ খননের বালু উত্তোলন করে ওই এলাকায় তাদের নিজস্ব জায়গা ভরাট করছে। তবে তার আগে থেকে ওই এলাকায় দীর্ঘ ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে ভূমিহীন মানুষ পাকা ও আধা পাকা বাড়িঘরে বসবাস করে আসছেন।

আজ দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মোটা পাইপের মাধ্যমে গড়াই নদ থেকে বালু উত্তোলন করে জিকে সেচ প্রকল্পের সড়ক বাঁধের পাশে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া বাসিন্দারা বসে দেখছেন। তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। বাবু কসাই নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁরা কয়েক ঘর বাসিন্দা প্রায় ৩০ বছর আগে গড়াই নদ থেকে প্রায় ৪০০ গজ দূরে পাশে জিকে সেচ প্রকল্পের বাঁধের সড়কের পাশে বসবাস করেন।

সে সময় এসব জমি পাউবো অধিগ্রহণ করে নেয়। তবে বাস করতে মৌখিক অনুমতি দেয়। এভাবে বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় মানুষের বসবাস বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ১৫ দিন আগে হঠাৎ করে পাউবোর লোকজন এখানে বড় বড় পাইপ লাগাতে থাকে। তারা জানায়, নিচু ও পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলা হবে। এতে বাড়িঘর তলিয়ে যাবে। একদিন হঠাৎ করে বালু উত্তোলন শুরু হলে যেমন ভাবে পেরেছে, বাড়ির মালামাল ও আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে দেয়।

কেউ কেউ সড়কের ওপর আশ্রয় নেয়। ১৫ দিনে অন্তত ৪৬টি বাড়ি বালুর স্তূপে তলিয়ে যায়।
তলিয়ে যাওয়া বাড়ির এক নারী রওশন আরা বলেন, তাঁর পাকা বাড়ি তলিয়ে গেছে। তবু তিনি সেখানে আছেন। কি করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না। কোথাও জায়গাজমিও নেই যে সেখানে বাড়িঘর তৈরি করবেন। তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘরের বাসিন্দারা বলেন, তাদের কারও নিজস্ব বা ব্যক্তি মালিকানা জমি সেখানে নেই। তবে ইচ্ছা করলে পাউবো বালু অন্যত্র ফেলতে পারত। তাহলে এতগুলো পরিবার রক্ষা পেত।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকার কবুরহাট থেকে শুরু করে বহলা গোবিন্দপুর হয়ে চাপড়া পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার জুড়ে গড়াই নদ খনন করা বালু ফেলার কাজ চলছে। এতে বহলা গোবিন্দপুর এলাকার অন্তত ৪৬টি বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, টয়লেটসহ সবকিছু।

পাউবো সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর আগে পরিকল্পনা করে এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, গড়াই নদ খননে বালু পাশেই নদের জায়গায় বা পুকুরে ফেলা হবে। এ ছাড়া বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় গড়াই নদে বাঁধের কাজ চলছে। কিন্তু পাশে পুকুরের পানি থাকায় মাঝে মাঝে এসব বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য পুকুরগুলো ভরাটের সিদ্ধান্ত আসে। সেই মোতাবেক পুকুর ভরাটসহ নিজস্ব জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে দেখা হয় পাউবোর এসডি আলী আফরোজের সঙ্গে। তিনি বলেন, যেসব জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে, তার সবটুকুই গড়াই নদের নিজস্ব জায়গা। তারপরও যারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন, তাঁদের বিবেচনা করা হচ্ছে। বালু ভরাট হয়ে গেলে সেখানে বাস করতে পারবেন।


এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top