সুদের টাকা দিতে না পারায় গাইবান্ধায় বাসচালকের আত্মহত্যা!
গাইবান্ধা থেকে | প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২১, ১৯:১৫

হাসান হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই গাইবান্ধায় আবারো সুদের টাকা দিতে না পারায় এবার গাইবান্ধায় ভিটেমাটি হারিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন কোব্বাস আলী নামে এক বাসচালক।
সোমবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের রথেরবাজার (জেলাল পাড়া) গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
কোব্বাস আলী জেলাল পাড়া গ্রামের আজিজার রহমান ছেলে। তিনি ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের নৈশ কোচের চালক ছিলেন। স্থানীয়রা জানায়, দশানি গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী সোনা মিয়ার কাছে সুদে ৩০ হাজার টাকা নেন কোব্বাস আলী। দেড় বছর পর কোব্বাসের কাছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন সোনা মিয়া।
টাকা দিতে না পারায় শনিবার কোব্বাসকে বেধড়ক মারপিট করেন সোনা। টাকার জন্য কিছুদিন আগে কোব্বাসের একমাত্র ভিটেমাটি জোরপূর্বক স্ট্যাম্পেও লিখে নেন তিনি।
কোব্বাসের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সম্প্রতি এ নিয়ে সালিশ হয়। সেই সালিশে লাভের অংশ বাদ দিয়ে আসলের ৩০ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সালিশ বৈঠকে সোনা মিয়া সব কিছু মেনে নেন। কিন্তু তারপরেও শনিবার লাভের টাকার জন্য কোব্বাসকে চাপ দেন তিনি।
খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টু বলেন, ‘৩০ হাজার টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে ১৮ মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা হয়ে যায় বলে দাবি করেছে সোনা মিয়া। এটার জন্য কোব্বাসের বাড়ি-ভিটে স্ট্যাম্প করে নেয় সে। তাকে মারধরও করা হয়।
‘এই সুদের টাকা ও বাড়ি-ভিটে জোর করে লিখে নেয়াতেই কোব্বাস আজ মরছে। এটার সঠিক তদন্ত করে বিচার হওয়া দরকার।’
গাইবান্ধা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাপ্পি কুমার বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতাল মর্গে নেয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’
এর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে এলাকায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় এক জুতা ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর এক মাস বাড়িতে আটকে রাখেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।
পরে ১০ মার্চ সদর উপজেলার বল্লমঝার ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের (খানকাহ শরীফ) দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ সময় অভিযুক্ত মাসুদ রানাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীয় জনতা। এ ঘটনায় পরদিন মাসুদ রানাকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় গাইবান্ধা সদর থানার দুই পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলায় প্রমাণ পায় গঠিত তদন্ত কমিটি।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান ও এএসআই মোশাররফ হোসেনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এনএফ৭১/আরএইচ/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।