পরকীয়ার অভিযোগে ধর্ম ভাই-বোনকে জুতাপেটা

মাদারীপুর থেকে | প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৬:২৫

মাদারীপুরে কথিত পরকীয়ার অভিযোগে ধর্ম ভাই-বোনকে ১‘শ জুতাপেটা। জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ঘুরানোর পর সমাজচ্যুত করার হুমকি।

মাদারীপুরে কথিত পরকীয়ার অভিযোগ তুলে প্রহসনমূলক শালিস বসিয়ে ধর্ম ভাই-বোনকে ১‘শ জুতাপেটা করেছে প্রভাবশালী একটি মহল। পরে তাদের জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ঘুরিয়ে সমাজচ্যুত করে ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সুতারকান্দি গ্রামে। মাতবরদের ভয়ে বিষয়টি প্রথমে গোপন রাখা হলেও মঙ্গলবার লোকমুখে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে প্রশাসন, পুলিশ, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ ঘটনায় মামলা হলে রাজৈর থানা পুলিশ ৩ শালিসিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

আত্মীয়তা সূত্রে ধরে সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে মনির মিয়া তার বোন খোদেজা বেগমের বাড়ি বেড়াতে আসেন। কিছুক্ষণ পরেই একই বাড়ির কালু ফকির, ইমরান ফকির, শাকিব আকন, রানা ফকির, শামীম ফকিরসহ ৮/১০ জন খোদেজা ও মনিরকে ঘর থেকে টেনে হিচড়ে বের করে বাইরে আনে। পরে খোদেজা ও মনিরকে বেঁধে ফেলে। এক পর্যায় বাড়ির উঠানে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রহসনের শালিস বসায়। শালিসিতে কালু ফকির গং কারো বক্তব্য না শুনে তাদের ইচ্ছেমত রায় ঘোষণা করে।

নির্যাতনের শিকার খোদেজা বেগম বলেন, ‘ওরা আমাকে ও আমার ভাইকে জোর করে বাইন্দা গ্রামের সবার সামনে ১০০ জুতার বাড়ি দিছে, জুতার মালা পরাই সারা গ্রাম ঘুরাইছে। আবার মোর ঘরে তালা দিছে। এহন আমরা ওগো ভয়তে গ্রাম ছাড়া। ওদের ডরে নিজের ঘরে যাইতে পারি নাই। এহন হুনছি ওরা নাকি আমাগো সমাজেরতোন বাইর কইর‌্যা দিবে। এই অপমানের পর আরকি বাইচ্যা থাকতে ইচ্ছা করে। গেছিলাম মরতে তয় তারা মেম্বার কইছে আমার অপমানের বিচার কইরা দিবো হেই কারণে মরি নাই। যদি বিচার না পাই তাইলে আমি আর দুনিয়ায় থাকুম না।’

এলাকার মেম্বার তারা মিয়া বেপারী বলেন, ‘ধর্মের ভাই-বোনকে কথিত বিচারের নামে একটি প্রহসনের শালিস বসায়। শালিসে এলাকার মেম্বার হিসেবে আমার কোন কথাই তারা শোনেনি।
বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘জঘন্যতম কাজটি যারা করেছে, যারা আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে তাদের এবং এর পেছনে ইন্ধনদাতাদেরও বিচার হওয়া উচিৎ।’

খোদেজা বেগম স্বামী ছাবেদালী ফকির বলেন, ‘আমি আইজ দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে আমার স্ত্রী খোদেজা বেগমকে নিয়ে ঘর-সংসার করে আসছি। তার চরিত্র খারাপ হলে আমিই আগে জানতাম। যদি আমার স্ত্রী কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে বিচার করতাম। ওনারা কেন আমার স্ত্রী ও আমার আত্মীয়কে জুতাপেটা করে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ঘুরাল ? এখন তারা বিচারের নামে আমাগো ঘরে তালা দিয়ে বের করে দিল। আমি ও আমার স্ত্রী ঘরে যেতে পারছি না। আমাগো সমাজচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছে, ভয়ে আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমার ছেলে মেয়ে আছে, তাদের বিয়ে দিয়েছি, নাতি-নাতনি রয়েছে। আমারা কিভাবে মানুষরে মুখ দেখাব। আমি এর বিচার চাই।’

রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদী বলেন, ‘ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমরা থানায় মামলা নিয়েছি। রাতে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার মুল হোতা কালু ফকিরসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্বরোচিত এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বাকি আসামীদের ধরার ব্যাপারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top