বাঘের ছোবলে নিহত হাবিবুর
খুলনা থেকে | প্রকাশিত: ৭ মে ২০২১, ০৪:২৪
অবুঝ শিশু দুটির এখনো বুঝার বয়স হয়নি তারা কি হারিয়েছে। মাসুম বাচ্চাদের নিয়ে দিশেহারা হাজেরা। ১৪ এপ্রিল ২২ দিন আগেই বাচ্চা দুটির পিতা হাবিবুর রহমান বাঘের ছোবলে নিহত হয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিহত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি। দুটি মেয়ের মধ্য একটির বয়স মাত্র ১ বছর ৬ মাস এবং অন্যটির বয়স ৬ বছর।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের হামলায় মৌয়াল হাবিবুর রহমান (২৮) নিহত হয়েছেন। এপ্রিলের বুধবার সকালে শ্যামনগরের কৈখালী স্টেশনের নিকটে হোগলডাঙা এলাকায় মধু সংগ্রহের সময় বাঘের কবলে পড়ে। নিহত হাবিবুর রহমান শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামের আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে। পরে দুপুর সাড়ে বারটার দিকে স্থানীয়রা বন বিভাগের সহায়তা সুন্দরবন থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। নিহত হাবিবুর রহমান এর আব্বা আব্দুল আজিজ মোল্লা এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কৈখালী স্টেশন থেকে পাশ (অনুমতিপত্র) নিয়ে এপ্রিলের শুরুতে আমিসহ সহযোগীদের সঙ্গে হাবিবুর সুন্দরবনে যায়। বুধবার সকালে হঠাৎ করে মধু ভাঙ্গার সমায় বাঘ তার ওপর হামলে পড়ে তাকে নিয়ে বনের ভিতরে চলে যায়। একপর্যায়ে আমি আমার বড় ছেলে হাবিবুর এর বড়ভাই ও জামাই সুন্দরবনে ঢুকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করি।
এছাড়া, মঙ্গলবার বিকেলে সুন্দরবনের কাছিকাটা পারাদুনি এলাকায় মধু সংগ্রহ করার সময় রবিউল ইসলাম (২৩) নামের আরেক মৌয়াল বাঘের হামলায় আহত হয়। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দন এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে।
বাঘের হামলায় আহত রবিউল ইসলামের বাবা আব্দুল হাকিম জানান, বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে ৩ এপ্রিল থেকে তারা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করছে। মঙ্গলবার বিকেলে কাছিকাটা পারাদুনি এলাকায় মধু কাটার সময় বাঘ রবিউলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসময় তিনিসহ অন্য সঙ্গীরা হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বাঘের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাঘ শিকার ছেড়ে বনের ভিতরে চলে যায়। রাতেই রবিউলকে নৌকায় করে লোকালয়ে আনা হয়। আহত রবিউল স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পল্লী চিকিৎসক সোলায়মান ইসলাম জানান, ঘাড়, পিঠ, হাতে ও মাথার ক্ষত স্থানে বিশেষ চিকিৎসায় রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, ‘সুন্দরবনে পৃথক পৃথক বাঘের আক্রমণে একজনের মৃত্যু ও আরেকজনের আহতের খবর শুনেছি।
আশিকুর জামান জানান, ভাগ্য গুণে বাঘের আক্রমণ থেকে জীবনে বেঁচে ফিরলেও ক্ষত থেকে যায় আমৃত্যু। বাঘের বিষ দাঁত যে শরীরের স্পর্শ করেছে সে শরীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়, ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে কর্মক্ষমতা। দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে নিতে হয় সুচিকিৎসা।
সেই নির্মম দুর্ভাগ্যের কাছে পরাজিত সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নং সোরা দৃষ্টিনন্দন গ্রামের হালিম শেখের ছোট পুত্র রবিউল শেখ। রবিউলের বয়স ২৫ বছর, ছেলে দুইজন। ৬/৮ মাস সময় লাগবে রবিউলের সুস্থ হতে। রবিউলের বাবা ছেলেকে বাঘের মুখ থেকে লড়াই করে ছাড়িয়ে এনে আবার চলে যাচ্ছেন বাঘের অভয়ারণ্যে জীবিকার তাগিদে।
রবিউলের সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজন লক্ষাধিক টাকা। যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে রবিউল দিনপার করছেন তাতে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে জীবিকার জন্য সুন্দরবনে না ফেরার আশংকা রয়েছে। আমাদের জরিপ বলছে, বাঘের আক্রমণের মুখ থেকে যারা জীবনে বেঁচে ফিরে এসেছে তাঁদের মধ্যে শতকরা ৯৯ জন আর সুন্দরবন ফেরেনি। রবিউল হয়ত আর সুন্দরবনে ফিরবেন না, জীবিকার জন্য বিকল্প পথ খুঁজবেন, যদি আপনি আমি পাশে দাঁড়াই।
আসুন আমরা নিহত হাবিবুর এর ফ্যামিলি ও আহত রবিউলের পাশে দাঁড়াই। আমরা ঈদের আগে এই ফ্যামিলি দুটিকে সহযোগিতা করতে চাই। সহযোগিতার জন্য - 01917173418 (নগদ, বিকাশ পারসোনাল)।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: খুলনা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।