মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জিকে খাল গিলে খেলো কুমার নদকে!

কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশিত: ২২ মে ২০২১, ০০:৩৯

জিকে খাল গিলে খেলো কুমার নদকে!

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুমার নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৪ কিলোমিটার গড় প্রস্থ ৭৫ মিটার। পদ্ম নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলা হয়ে মাগুরা জেলায় অবস্থিত অন্যতম নদ কুমার।

তৎকালীন সময়ে সড়ক পথের তেমন একটা উন্নতি না থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলো কুমার নদ। কুমার নদকে ঘিরেই সে সময়ে কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় গড়ে উঠেছিলো ছোট বড় হাট বাজার শহর ও ব্যবসার কেন্দ্র।

বর্তমানে কুমার নদ প্রায় সারা বছরই পানির অভাবে একটি মরা খালে পরিণত হয়ে পড়ে রয়েছে। এই সমস্ত এলাকায় বহুবছর ধরেই কুমার নদে ঘাস জঙ্গল কচুরিপানা জন্মে থাকে পানির অভাবে। আবার কোথাও দেখা যায় দখলের কবলে পড়ে সরু নালায় পরিণত হয়ে ধুকছে এক সময়ের প্রবল স্রোতের কুমার নদ। তবে কুমার নদের আজকের এই ভয়াবহ পরিণামের পিছনে রয়েছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ জিকে খালের সৃষ্টির শুরুতেই।

সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সময়ের সরকার ১৯৬১ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ জিকে খাল খনন শুরু করেন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থেকে। দেখে যায়, জিকে খালটি মিরাপুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে এসে কুমার নদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিজের (জিকে খালের) বক্ষে ধারণ করে আলমডাঙ্গায় এসে উগ্রে দিয়েছে। বাজিতপুর ও আলমডাঙ্গায় কুমার নদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দু’টি স্লুইসগেট নির্মান করে কুমার নদের নিজস্ব পানির স্রোতধারায় গতিরোধ করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৬১ সালে জিকে খাল খননের সময় কুমার নদের নিজস্ব পানির প্রবাহ রুদ্ধ করায় কুমার নদ হারিয়ে ফেলতে শুরু করে তার যৌবন এমনটাই ধারনা এলাকাবাসীর

নদপাড়ের জেলেদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, যখন কুমার নদে স্রোতে চলতো তখন নদে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির, শিং, কৈই, মাগুর, বোয়াল, ভেদা, ফলৈই, পাবদা, চিংড়ি, শোল, গজাড়, টাকি, শরপুটি, মলা ঢেলা, চিতল, পাঙ্গাস, টেংরা, তারাবাইম, বাইম, গৈচা, নাচপি, খয়রা, আইড়, চাঁদা, খৈলশা সহ হরেক প্রজাতির মাছ। সেই সাথে রুই ও কার্পজাতীয় মাছেদের নিরাপদ প্রজননের স্থানও ছিলো প্রবাহমান কুমার নদ। কুমার নদে ঐ সময় দেখা মিলতো হরেকরকমের পারিযা পাখিদেরও।

তবে কুমার নদের অনেক স্থান ঘুরে দেখা যায়, কুমার নদকে জীবিত রাখতে খণ্ড খণ্ড স্থানে খননও করে থাকেন মাঝে মধ্যে। কুমার নদ পাড়ের বাসিন্দা ও সচেতন মহল বলেন, কুমার নদকে যতদিন না জিকে খালের রুদ্ধতা থেকে উদ্ধার করে কুমার নদের পানির প্রবাহ পথ তার নিজস্ব চলা চলার জন্য মুক্ত করা না যায়, তাহলে কুমার নদের এমন খণ্ড খণ্ড খনন কাজ করে কুমার নদকে তার হারানো যৌবনে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কুমার নদের নিজস্ব পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ রেখে খনন করলে শুধুই টাকার অপচয় হবে, কাজের কাজ কিছুই হবেনা।

এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১



বিষয়: কুষ্টিয়া


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top