রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আজিম হত্যার পরিকল্পনা শাহীনের, কিলিং মিশনের প্রধান মোকাররম!

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৪, ১৩:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের কলকাতায় খুন হয়েছেন। বুধবার (২২ মে) তার মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয় কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে। পুরো মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন নিহতের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

এ হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকেই আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। কিলিং মিশনের প্রধান মোকাররম আজিমের পরিচিত। আর ছোটবেলার বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনের ষড়যন্ত্রে তাকে হত্যা করা হয়। শাহীনও ঘটনার সময় ভারতে ছিলেন। পরে তিনি দেশে ফেরেন এবং দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আজ সকালেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তিনি খুন হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ আটককৃতরা কি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে?—জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, অনেক তথ্যই জানা গেছে। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’

 
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, আজিমের সঙ্গে তিন জন ভেতরে যাচ্ছেন। এদের এক জন নারী। অন্য দুই জন পুরুষ। ধারণা করা হচ্ছে, এই তিন জন হলেন—মোকাররম, সিনথিয়া ও মারুফ। তবে খুনের সময় ছিলেন ছয় জন। অন্য তিন জনের ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত জানতে পারেনি পুলিশ। এদের দুই জন ভারতীয় নাগরিক বলে পুলিশের ধারণা।

ঐ ফ্ল্যাটে আজিমকে হত্যার পর লাশ তিন টুকরো করা হয়। তিনটি ব্যাগে ভরে তিন জনকে ব্যাগগুলো ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাগগুলো তারা কোথায় ফেলেছে, সে ব্যাপারে মোকাররম কিছু বলতে পারেনি। সিসিটিভির ফুটেজ বলছে, ১৩ মে তারা ফ্ল্যাটে ঢুকলেও ঐ দিন কেউ বের হননি। পরে এক জন ১৫ মে, এক জন ১৬ মে, এক জন ১৭ মে বের হন। কিন্তু আজিমকে আর বের হতে দেখা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ঐ ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ পেলেও ফ্ল্যাটের মধ্যে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন লাশের সন্ধানে অভিযান চলছে।

শাহীনের সঙ্গে আজিমের কেন বিরোধ: মোকাররম গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন, শাহীনের সঙ্গে আজিমের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজিমের চিনির ব্যবসা আছে। এছাড়াও তারা দুই জন আরও কিছু ব্যবসায় জড়িত। সেই ব্যবসার ৪ কোটি টাকা আজিম পাবেন শাহীনের কাছে। কেউ বলছেন, এটা হুন্ডির টাকা, আবার কেউ বলছেন, এটা স্বর্ণ চোরাকারবারির টাকা।

মোকাররমও নিশ্চিত নন, এই টাকা আসলে কীসের। তবে ৪ কোটি টাকা বিরোধের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শাহীন টাকা দিচ্ছেন না। নির্বাচনের আগে গত অক্টোবরে এ নিয়ে মীমাংসা বৈঠক হয়। বৈঠকে মীমাংসাও হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের দ্বন্দ্ব থেকে যায়। কয়েক দিন আগে একে অপরকে হুমকি দিয়েছে। সেখানে শাহীন বলেছে, ‘আমি টাকা দেব না’, আর আজিম বলেছে, ‘কীভাবে টাকা আদায় করতে হয় আমি জানি।’ এরপর বিরোধ আরো বাড়ে।

এরপর শাহীন এমপি আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার এই পরিকল্পনায় যোগ দেন মোকাররম ও মারুফ। সিনথিয়াকে ব্যবহার করে কিলিং মিশন সম্পন্ন করেন তারা। হত্যাকাণ্ডের সময় শাহীনও ভারতে ছিলেন। দুই দিন পরই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর এক দিন পরই দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top