রনি হত্যা মামলার গ্রেফতার ৩
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৪, ১২:৫০
খুলনা থানা এলাকায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত ০৩ (তিন) জন গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের সাথে মিডিয়া বিফ্রিং।
বুধবার (২৯ মে) দুপুর ০১:১০ ঘটিকায় খুলনা থানা প্রঙ্গণে কেএমপি’র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা খুলনা থানা এলাকায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিন জন গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।
কেএমপি’র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা মিডিয়া বিফ্রিংয়ে বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর।
আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, স্বর্ণ চোরাচালানকারী, মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গি, অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবসায়ী, চোরাই মোটরসাইকেল, জুয়াড়ি, বিকাশ এবং অনলাইন প্রতারণায় জড়িত প্রতারক, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে যারা প্রভাব বিস্তার করে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ মে সন্ধ্যা ০৬:৩০ ঘটিকায় খুলনা সদর থানা পুলিশের কাছে সংবাদ আসে যে, খুলনা সদর থানাধীন দক্ষিণ টুটপাড়া জনকল্যাণ স্কুলের পূর্বপাশে ক্যালোরিন ফুড কর্ণার এর সামনে ইটের সলিং রাস্তার উপর একজন ব্যক্তিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে।
গুলির শব্দে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পায় মোঃ রনি সর্দার নামক একজন যুবক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। ঘটনাস্থানে গিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (৩৪) তার নিকট থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানতে পারে যে ৭/৮ সদস্যর একটি সন্ত্রাসী দল হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ওয়ান শুটার গান সহ, দা, চাপাতি, চাইনিজ কোরাল, ছুরি এছাড়া আরো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে বসে থাকার রনিকে এই সন্ত্রাসী দল হামলা করে।
চোখের পলকে সন্ত্রাসী দল রনিকে গুলি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় পরবর্তীতে ঘটনার স্থানে থাকা লোকজন ও দোকানদারের ৯৯৯ ফোন করে থেকে পুলিশেকে এই গুলা গুলির ব্যাপারে জানায়। জানতে পেরে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনায় স্থানে এসে পৌঁছায় এবং একজন প্রত্যক্ষদর্শী সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে ০৭/০৮ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদল রনিকে গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ যুবক রনিকে পুলিশ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
উক্ত ঘটনায় খুলনা সদর থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্তে শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের নাম পাওয়া গেলে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা এবং আভিযানিক টিম মিলে চেকপোস্ট ও সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা করে।
ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে মহনগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অভিযানের সময় আসামীদের আটকস্থল হতে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য (গাঁজা) উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, মো. রনি সর্দার এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং মাদক ব্যবসায়ের পার্টনারদের সাথে মাদকের অর্থের লেনদেন নিয়ে বিরোধের জের ধরে দীর্ঘদিন যাবৎ সে এলাকায় আসে না। সম্প্রতি গ্রেফতাকৃত আসামীরা রনিকে হত্যার পরিকল্পনা করে কৌশলে এলাকায় ডেকে নিয়ে আসে। তদন্তে জানা যায় যে, পূর্বশত্রুতা ও মাদকের অর্থ ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে পূর্বে থেকেই আসামীদের সাথে রনির দ্বন্দ্ব চলছিলো। এরই জের ধরে গতকাল সন্ধ্যায় রনিকে তার বিরোধী পক্ষ গুলি করে হত্যা করে।
এই ঘটনায় খুলনা সদর থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক টিম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকা আসামীদেরকে দ্রুততম সনাক্ত করত: মহানগরী এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী নয়ন (৩০), পিতা-মোঃ বাবুল শেখ, সাং- দক্ষিণ টুটপাড়া, থানা-খুলনা সদর, জেলা-খুলনা, এ/পি সাং-মতিয়াখালি রোড (জনৈক খলিল এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া) থানা-খুলনা সদর, খুলনা মহানগরী;
আসামী মিরাজ মৃধা (২৫), পিতা-ফরহাদ মৃধা, সাং-তেতুলবাড়ীয়া, বহরবুনিয়া ইউনিয়ন, থানা-মোড়েলগঞ্জ, জেলা-বাগেরহাট, এ/পি সাং-শিপইয়ার্ড কর্ণার হাসপাতাল, থানা-লবণচরা, খুলনা মহানগরী এবং
আসামি জসিম হাওলাদার (২১), পিতা-মো. খোকন হাওলাদার, সাং-বড়শিবাওয়া জিলবুনিয়া, থানা-মোড়েলগঞ্জ, জেলা-বাগেরহাট, এ/পি সাং-সিমেন্ট ফ্যাক্টারী রোড, থানা-লবণচরা, জেলা-খুলনাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে ০১ টি ওয়ান শুটারগান (ফায়ারিং পিন সহ), ০২ রাউন্ড গুলি এবং ০২ টি ছুরি উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য আসামীদেরকে আমরা ইতিমধ্যে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদেরকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।
গতকাল রনি সর্দার নামক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ভিকটিমের মাতা মমতাজ বেগম থানায় এসে ১৫ জন আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আরোও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে খুলনা সদর থানার মামলা নং-৫১, তারিখ-২৯/০৫/২০২৪, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
অত্র মামলার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কুন্ডু’র উপর অর্পণ করা হয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলাসহ অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে।
যার মামলা নং-৫০, তারিখ-২৯/০৫/২০২৪, ধারা-The Arms Act, 1878 এর 19A। মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য জোর পুলিশি চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রাথমিক তদন্ত ও সিডিএমএস পরিচালনা করে গ্রেফতারকৃত আসামী নয়নের বিরুদ্ধে ০১ টি হত্যা মামলা ও মাদকসহ খুলনা থানায় ০৪ টি মামলা রয়েছে এবং আসামী মিরাজ মৃধার বিরুদ্ধে খুলনা থানায় ০৪ টি মাদক মামলা রয়েছে।
উক্ত মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতি: ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব এ.জেড.এম তৈমুর রহমান, অতি. ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) জনাব মোহা. আহসান হাবীব, পিপিএম, সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) জনাব গোপীনাথ কানজিলাল এবং খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মো. কামাল হোসেন খাঁন-সহ পুলিশ অফিসারবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে আসামিদ্বয়কে হত্যা মামলা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। হত্যা মামলায় তারা সরাসরি জড়িত ছিল এই মর্মে তারা ১৬১ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। সকল আসামিদের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আজ সকাল ১১ টায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আদালত উপস্থিত করা হইবে।সকল আসামিদ্বয়কে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ দ্বারা জবানবন্দি দেয়। এবং আসামিদ্বয়কে কোর্টের নির্দেশের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
বিষয়: কেএমপি গ্রেফতার হত্যা মামলা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।