স্বর্ণের দাম আকাশছোঁয়া, আসল কারণ কী
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৪

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন স্বর্ণের দাম ওঠানামা করছে। মাঝেমধ্যে কিছুটা কমলেও তা বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। কারণ, প্রায় দ্বিগুণ হারে মূল্যবৃদ্ধিতে সপ্তাহের ব্যবধানে সব রেকর্ড ভেঙে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে মূল্যবান ধাতুটি।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রয়টার্স জানায়, সোমবার স্বর্ণের বিশ্ববাজার ছিল অস্থির। এ দিন স্পট মার্কেটে সেশনের শুরুতে স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৩ হাজার ৯৬৯ দশমিক ৯১ ডলারে পৌঁছায়। অবশ্য পরে তা কমে প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫৬ দশমিক ১৯ ডলারে। একই সময়ে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৭৬ দশমিক ৩০ ডলারে।
স্বাভাবিক চোখে স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম কমলেও তা ধর্তব্য নয়। কারণ, এ সপ্তাহে ইতিহাসে প্রথমবার স্বর্ণের দাম ছুঁয়েছে ৩৯০০ ডলার। সপ্তাহ শেষের আগেই বর্তমান মূল্য তা থেকেও বেড়ে চলেছে।
২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছিল, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডের চাহিদা, ডলারের দুর্বলতা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ভূমিকা রেখেছে।
এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইয়েনের দুর্বলতা, মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়েছে। কেসিএম ট্রেডের বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, কম সুদের পরিবেশে স্বর্ণই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ। সারা বিশ্বের মানুষ স্বর্ণ মজুতের দিকে ঝুঁকছেন।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাজুসের এক সদস্য জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও বাড়তে থাকলে বাংলাদেশেও তা সমন্বয় করতে হবে। তার ভাষায়, স্বর্ণের দামের ওপর দেশের ব্যবসায়ীদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশ্ববাজারে যেমন দাম বাড়ে বা কমে, এখানেও তার প্রতিফলন ঘটে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, একাধিক আন্তর্জাতিক কারণ স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে। আমেরিকার শুল্কনীতি নিয়ে টানাপোড়েন, চীন-রাশিয়া-ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-সংক্রান্ত উত্তেজনা এসব কারণে ডলারের প্রতি আস্থা কমছে। ফলে চীন ও ভারতসহ অনেক দেশ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ মজুত করছে। এ ছাড়া খনিতে উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহ কমে যাওয়াও দামের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।
আরেকটি কারণ হলো, ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা। একই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে জাপানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চলমান মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে।
গত মাসে স্বর্ণের দামে কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস মিলেছিল। কিন্তু মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দিকে আরও ঠেলে দিয়েছে।
একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ ক্রয় বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে চীনসহ বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অভূতপূর্ব হারে স্বর্ণ কিনছে। দাম বাড়ানোর পেছনে এটিও মূল ভূমিকা পালন করছে বলে অনেকে মনে করেন।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণের দাম। এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এবার ভরিতে ৩ হাজার ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ২ লাখ ৭২৬ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।