জেনে নিন শকুন সম্পর্কে অজানা বিস্ময়কর কিছু তথ্য (ভিডিও)
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২০, ২০:৫২
মোহসিন কবির
প্রবাদ আছে ‘শকুনের দোয়ায় গরু মরেনা’। শকুনের দোয়ায় হয়তো ঠিকই গরু মরেনা, কিন্তু মরে যাওয়া গরু যদি শকুন না খেতো হয়তো তার প্রভাবে মানুষ মারা যেতো। কারণ, গরু কিংবা অন্যসব প্রাণী মরে যাওয়ার পর তা পঁচে গিয়ে পরিবেশ দূষিত হয়। এর ফলে নানা রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হয়। কিন্তু মৃত প্রাণী ভক্ষণ করে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করায় তাকে বলা হয়ে থাকে ‘প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী’।
তীক্ষ্ন দৃষ্টি শক্তির অধিকারী শকুন সাধারণত লোক চক্ষুর আড়ালে বট, পাকুড়, অশ্বথ, ডুমুর জাতীয় কিছুটা বড় আকৃতির গাছে বাসা বাঁধে। একই বাসা ঠিকঠাক করে এরা তা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। তবে ডিম পাড়ার সময় এরা গুহা, গাছের কোটর কিংবা পর্বতের চুড়াকে বেছে নেয়। সেপ্টেম্বর থেক মার্চ পর্যন্ত শকুনের প্রজননকাল। ৪৫ থেক ৫০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়।
পৃথিবীতে মোট ১৮ প্রজাতির শকুন রয়েছে। আর বাংলাদেশে ৬ টি প্রজাতির বিপুল সংখ্যক শকুন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেলেও বর্তমানে এই প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় কোথাও গরু মহিষ কিংবা গবাদি পশুর মৃতদেহ যেখানে ফেলা হতো সেখানেই দল বেঁধে হাজির হতো শকুন।
বিশ্বে ১৮ প্রজাতির শকুনের মধ্যে পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধে ৭ প্রজাতি এবং পূর্ব গোলার্ধে তথা ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলে ১১ প্রজাতির শুকুন রয়েছে। বাংলাদেশে যে ৬ প্রজাতির শকুন দেখা যেতো সেগুলো হলো- বাংলা শকুন, রাজ শকুন, গ্রীফন, বা ইউরেশীয় শুকুন, হিমালয়ী, সরুঠোট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন।
বিশ্বজুড়েই শকুন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৯০ ভাগ শকুন বিলুপ্ত হয়ে ১০ ভাগ টিকে আছে। তবে বাংলাদেশের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিভিন্ন কারণে দেশের ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়েছে। একারণে বর্তমানে দেশে মাত্র ২শত ৬০ টি শকুন আছে।
এজন্য, বিলুপ্তপ্রায় এই শকুন রক্ষায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১০ সালে দেশব্যাপী শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এছাড়া, ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন এবং ২০১৪ সালে দেশের দু’টি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১৬ সালে দশ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০২৫) বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাঠামো হিসেবে কাজ করছে।
দেশব্যাপী শকুনের খাদ্য প্রাণীর চিকিৎসায় কিটোটিফেন নিষিদ্ধকরণ বিষয়েও চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া, ২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালীন সময়ে বাড়তি খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ও সুন্দরবনে দু’টি ফিডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরির্চযা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এনএফ/এমকে/২০২০
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।