চলন্ত বাসে টিকটক, ফেসবুকে ভিডিও ধারণ বন্ধে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:৩৬

চলন্ত বাসে টিকটক, ফেসবুকে ভিডিও ধারণ বন্ধে আইনি নোটিশ

চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতে ফেসবুকার ও টিকটকারদের উৎসাহ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে এবং এসব দৃশ্যর ভিডিও ধারণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ১৬ বাস কোম্পানী বরাবরে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা জজ কোর্টের নয়জন আইনজীবী।

পাশাপাশি এ নোটিশের অনুলিপি সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান,বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব, বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক, নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে।

১৬ বাস কোম্পানী হলো- হানিফ এন্টারপ্রাইজ,শামলী এন.আর, গ্রীন লাইন পরিবহন, এস.আর. ট্রাভেলস, এনা ট্রান্সপোর্ট, নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ,সোহাগ পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, গোল্ডেন লাইন পরিবহন,দেশ ট্রাভেলস, টিআর ট্রাভেলস, সাকুরা পরিবহন এবং ইমাদ এন্টারপ্রাইজ।

গত ৬ অক্টোবর জনস্বার্থে অ্যাডভোকেট এস. এম. জাবিরুল হক (কাজল), মো. মেহেদী হাসান, মো.হুমায়নকবির সরকার, আদলু সাইন, মুশফিকুর রহমান সেতু, আবু তাহের রনি, এইচ. এম. রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, মো. ওবায়দুল্লাহ কাজী ও মো. মিলন হোসেন এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতিকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকা থেকে দূর পাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন সেবায় চলমান বাস সমূহে কিছু চালকগণ বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানোর কারণে বিভিন্ন সময়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এসব দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী পঙ্গু হওয়াসহ নিহত পর্যন্ত হয়েছেন এবং আপনাদের (১৬ বাস কোম্পানী) পরিবহনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

বেপরোয়াভাবে গাড়ীচালানোর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গাড়ী চালকদের বিভিন্ন সময়ে প্ররোচিত ও উৎসাহিত করে চলছে এবং মহাসড়কে বাস দিয়ে বাউলি বাজিতে মেতে উঠছে। এই স্বার্থান্বেষী মহলের অধিকাংশরা ফেসবুক ও টিকটক ব্যবহার করেন এবং এই সব ব্যক্তি ফেসবুক ও টিকটক ছাড়াও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট / চ্যানেল খুলে চালকদের দ্রুত গতিতে গাড়ীচালানোর উৎসাহ দেওয়াসহ সেসব দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুক গ্রুপ-পেইজে এবং টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন। ফেসবুকার ও টিকটকাররা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাস চালকদের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগীতার পরিবেশ তৈরি করে চলেছে এবং চালকরা গাড়ী চালানোর সময় ফেসবুকার ও টিকটকাররা চালকের পাশে বসে বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানোসহ বাস চালকদের উস্কে দিয়ে বারবার হর্ন বাজানো, ওভারটেকিং, বাউলি দেওয়া, গুটি দেওয়া, ডিপার লাইট দেওয়া, হার্ড ব্রেকিং করাসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। যা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ, ইউটিউব ও টিকটকের ভিডিও ছবি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

সড়ক ও মহাসড়কে দ্রুতগতিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং ফেসবুকার ও টিকটকারগণ কর্তৃক চালকদেরকে ওভারটেকিং, বাউলিং, ডিপার লাইট দিয়ে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সহ প্রচলিত আইন বিরোধী।’ নোটিশে এই নয়জন আইনজীবী এ বিষয়ে তিনটি মতমত দেন। সেগুলো হলো- (ক) গাড়ীর গতিসীমা সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় রাখার জন্য প্রতিটি বাসে ডিজিটাল স্পিড মিটার/অ্যাপস্ স্থাপন করা; (খ) চালকের পাশে ইঞ্জিন কাভারের উপরে কোন যাত্রীসহ ফেসবুকার ও টিকটকার যেন ভিডিওকরতে না পারে, বসতে না পারে এবং ড্রাইভারকে গাড়ী চালানোকালীন সময়ে প্ররোচিতকরতে না পারে, সেই মর্মে সহজে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাস্থাপন করা এবং (গ) যাত্রীদের জীবন, মাল ও সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে টিকিট ও নির্দিষ্ট কাউন্টারব্যতীত যাত্রী উঠানামা নিষিদ্ধ করা।

তাই নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে মতামতসমূহ প্রতিপালন এবং বাস কোম্পানী/ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবহনের চালকদের প্রতি গাড়ী চালানোর ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নোটিশ জারি করার জন্য জনস্বার্থে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নোটিশের অনুরোধগুলোযথাযথভাবে পালন করে বিষয়টি নোটিশদাতাদের জানাতেও বলা হয়েছে। অন্যথায় ভবিষ্যতে যেকোন অনাকাঙ্খিত র্দুঘটনার জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top