গরমে মাইল্ড স্ট্রোক! করণীয় কি?
রাশেদ রাসেল | প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৫৭
সারাদেশে যে দাবদাহ চলছে, তাতে মাইল্ড স্ট্রোক করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এটি হলে কি করবেন? আপনার করণীয় কি?
মাইল্ড স্ট্রোক মিনি স্ট্রোক নামেও পরিচিত। এ ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ জমাট বেঁধে যায়। রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে বলা হয় স্কিমিক অ্যাটাক। অতিরিক্ত গরমে বা যে কোনো কারণে মস্তিষ্ক হঠাৎ সামান্য রক্ত ব্যবহার করে। কিন্তু মস্তিষ্কের কোষগুলো সংবেদনশীল। অক্সিজেন ও শর্করা সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলেই কিছুক্ষণের মধ্যে কোষগুলো মরতে শুরু করে। এতে মস্তিষ্কের ওই কোষগুলো শরীরের যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অংশ প্যারালাইজড হওয়ার আশংকা বাড়িয়ে তোলে।
যেভাবে হয় : এতে মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য চালু হয়। দুধরনের মাইল্ড স্ট্রোক হয়ে থাকে- হেমোরেজিক ও স্কিমিক। হেমোরেজিকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে কিন্তু স্কিমিকে রক্তক্ষরণ হয় না।
সতর্কতা : উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অ্যালকোহল থেকে এ ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রতিরোধে আগে থেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকরা মনে করেন, মাইল্ড স্ট্রোক থেকে বড় ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায়ও দেখা গেছে, বিশ্বে মাইল্ড স্ট্রোক করা রোগীর শতকরা ৫ শতাংশই পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের স্ট্রোকের সম্মুখীন হয়।
লক্ষণ : মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা আঞ্চলিকভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া- দুই অবস্থার লক্ষণ প্রায় একই। যেমন- মাথা ঝিমঝিম করা, প্রচণ্ড মাথাব্যথার সঙ্গে ঘাড়, মুখ ও দুই চোখের মাঝখান পর্যন্ত ব্যথা হওয়া, হাঁটতে, চলাফেরা করতে এবং শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা হওয়া, কথাবার্তা জড়িয়ে যাওয়া এবং অস্পষ্ট শোনানো, শরীরের একপাশে দুর্বল, অসাড় কিংবা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া, চোখে অস্পষ্ট দেখা, অন্ধকার দেখা কিংবা ডাবল ডাবল দেখা, বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া ইত্যাদি।
স্ট্রোক হয়েছে বুঝবেন যেভাবে : শরীরের কোনো একদিকে দুর্বলতাবোধ করা বা শরীরের কোনো একদিক নাড়াতে না পারা, হাত-পায়ে অবশ ভাব, মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হওয়া, কথা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মুখের অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, বেসামাল হাঁটাচলা, হঠাৎ খিঁচুনি বা ধপ করে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে বুঝতে হবে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন হলে রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেওয়া যাবে না। কারণ এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আরও ক্ষতি করতে পারে। বরং মুখে জমে থাকা লালা, বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। আঁটোসাঁটো জামা-কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে। হাসপাতালে যাওয়ার সময় খেয়াল করে রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইল সঙ্গে নিতে হবে।
স্ট্রোকের পর করণীয় : অতি দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি ব্রেইনের রেডিওলজিক টেস্ট, সিটিস্ক্যান, এমআরআই করা উচিত। ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করা উচিত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাও করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।