নভেম্বরে তফসিল, ভোট ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলো নির্বাচন কমিশন

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৩৮

রোডম্যাপ সংক্রান্ত ২০ পৃষ্ঠার বই উন্মোচন

রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। একই বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান। তবে অসুস্থ থাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল উপস্থিত ছিলেন না। এসময় রোডম্যাপ সংক্রান্ত ২০ পৃষ্ঠার বই উন্মোচন করা হয়।

সিইসির অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন, আস্থাশীলতার ঘাটতি আছে। তবুও কমিশন শতভাগ আন্তরিকতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করবে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি মাস থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কী কী কার্যক্রম চলবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্র্নিধারণ করা হবে। এ জন্য আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে আগামী বছরের জানুয়ারিতে নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে।

ইসি কমিশনার আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের সময় সংবিধানের আলোকে যেসব সুপারিশ এসেছে সেগুলো নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবার সহায়তা দরকার।

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, সুষ্ঠু হলে ক্রেডিট রাজনৈতিক দল ও সবার। রোডম্যাপ সংশোধনের সুযোগ আছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় দল, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞ, ইভিএম কারিগরি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদসহ নানা অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। সবার মতামত নিয়ে আইন সংস্কার, ইভিএমে ভোটগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিয়েছে। হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তথ্যসংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদনও নেওয়া হচ্ছে। জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদেনের অপেক্ষা রয়েছে।

এরই মধ্যে সিইসি জানিয়েছেন— এবার সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম আর ১৫০ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন— সম্ভব হলে সবকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ইচ্ছা রয়েছে ইসির, বাজেটে সংকট হলে অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় সিসি ক্যামেরা রাখার ইচ্ছা রয়েছে।

২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হলে ভোটের সময়সূচি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংলাপ, সীমানা পুননির্ধারণ, আইন সংস্কার, দল নিবন্ধনসহ ভোটের ক্ষণগণনা শুরু, তফসিল ঘোষণা, ফল গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত নানা কর্মকৌশলের সঙ্গে ‘রোডম্যাপ’ তুলে ধরে তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন।

ওই কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোটের প্রচলনও শুরু করেছিল। বিদায়ের আগে ওই কমিশন পঞ্চবার্ষিক কর্মকৌশলও প্রণয়ন করেছিল।নভেম্বরে তফসিল, ভোট ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেএটিএম শামসুল হুদা কমিশনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নানা মহলের আগ্রহের মধ্যে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা কমিশনও এক ধরনের কর্মপরিকল্পনা ধরে এগিয়ে নিয়ে যায় ইসি সচিবালয়। সবশেষ কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালু করে যায়। ছয়টি আসনে ভোটও হয়।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা’ প্রকাশ করলো।

২০১৯ সালের ৩০ জানুয়রি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনে সীমানা পুনর্র্নিধারণ করে খসড়া প্রকাশ করবে ইসি।

অন্যদিকে, নির্বাচনী আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা হবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এছাড়া একই বছরের আগস্টে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি করবে ইসি। ওই বছরের জুনেই নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ইসির কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে— নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা, বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নেওয়া, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ।

আরও রয়েছে— বিধিবিধান অনুসরণ করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালু, অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম, নির্বাচনী কার্যক্রমে গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোর আওতায় সম্পৃক্তকরণ ও ভোটারদের সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম।

ইসির পরিকল্পনার মধ্যে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে যে বিষয়টি, তা হলো— ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমে (জিআইএস) নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্র্নিধারণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন প্রণয়ন।

এছাড়া আগামী মাসে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ, আগামী নভেম্বরে নারী নেতৃদের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে সুপারিশমালার খসড়া চূড়ান্তকরণ ও ডিসেম্বরে সুপারিশমালা চূড়ান্তকরণ।

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top