গার্ড অব অনার পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:১৩
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাজ চৌধুরীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেদায়াতুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এতে নেতৃত্ব দেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছোট ভাই বিগ্রেডিয়ার শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনাদের সবার হৃদয়ে তিনি আছেন, ব্যক্তিগতভাবেও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি পরিবারের সবার জন্য বিশেষ সংবেদনশীল ছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা এসময়ে ওনার মৃত্যু চাইনি। আমাদের পরিবারে তিনি মহীরুহ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে আমরা তিন ভাই অংশগ্রহণ করেছিলাম। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি আমাদের সবার খোঁজ নিয়েছেন। তার মধ্যে কোনো লোভ ছিল না। তিনি পরিবারের জন্যও কোথাও সুপারিশ করতেন না।
এরআগে, সকাল ১০টার দিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বারডেম হাসপাতালের হিমাগার থেকে ফ্রিজিং ভ্যানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। বেলা ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কফিন জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে বেলা আড়াইটায় জানাজার পর আবার বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে কফিন।
গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আলতাফুন্নেসা জানান, আগামীকাল শুক্রবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল ১০টায় তার মরদেহ নেয়া হবে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। জুমার নামাজ শেষে সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ। ৮১ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে হাসপাতাল গড়ে তোলার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর চিকিৎসা গবেষণা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা ধরনের কাজ করেছেন। জাতীয় ঔষধ নীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নেও বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মাধ্যমে সুলভে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত না হলেও আজীবন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। গণমুখী বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সংহতি-সমর্থন দিয়ে গেছেন। জাতীয় জীবনে অবদান রাখার জন্য ১৯৭৭ সালেই স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা সম্মান পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড।
কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ ২০২২ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘এনআরবি লিবারেশন ওয়ার হিরো ১৯৭১’ পুরস্কার দেয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।