৩২ বছর পর মুক্তি, কে এই জল্লাদ শাহজাহান

রাজিউর রেহমান | প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৩, ২৩:০৪

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা ‘জল্লাদ’ শাহজাহান মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় ৩২ বছর কারাভোগের পর রোববার বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। চলুন জেনে আসি, কে এই জল্লাদ শাহজাহান?

১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ তার জন্ম। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে জন্ম হয় তার। বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া। মাতা সবমেহের। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত।

জল্লাদ শাহজাহান নরসিংদী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ স্বাধীনতার যুদ্ধ জয়ের ৪ বছর পর। তার পারফরমেন্স দেখে কেন্দ্রে থেকে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তাকে নরসিংদী জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব দিতে চাইলে তিনি রাজি হয়ে যান। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

ছেলে হিসেবে শাহজাহান প্রচণ্ড বন্ধু পাগল মানুষ ছিলেন। একবার তার গ্রামে নারী ঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। শাহজাহানের দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে তাকে নিয়ে বিচারে বসানো হয়।

সেই বিচারে তাকে অপরাধী প্রমাণিত করে তাকে সাজা দেয়া হয়। এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্ততা শুরু। তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নেবেন।

নারীঘটিত ওই ঘটনার পরে তিনি সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। এছাড়া, কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করার পর থেকে যে কোনো অপারেশনে তার চাহিদা দিনকে দিন বাড়তে থাকলো।

তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করেছিলেন ১৯৭৯ সালে মাদারীপুর জেলায়। এটাই ছিল তার জীবনে সর্বশেষ অপারেশন। সেখানে তার অপারেশন শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাবে।

মানিকগঞ্জে পুলিশ চেক পোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে তা জেনে যান। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। রাতভর মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধ করেন কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি।

এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হন পথিমধ্যে পুলিশ তাকে আটক করে ফেলে। তার গতিময় জীবনের এখানেই সমাপ্তি ও এরপর থেকে তার বন্দী জীবন শুরু।

প্রথম ১৯৮৯ সালে তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এটাই তার জীবনের প্রথম কারাগারে কাউকে ফাঁসি দেয়া। তার যোগ্যতা দেখে আট বছর পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের আসন প্রদান করেন। প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে প্রথম ফাঁসি দেন। 

যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেছেন শাজাহান ও রাজু। তবে জল্লাদ শাজাহান অন্য সব জল্লাদের চেয়ে আলাদা।

একসময় চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে জল্লাদ শাজাহান। কিন্তু ভাগ্য তাকে টেনে নিয়ে গেছে অন্ধকার জগতে। এরপর থেকে জেলের সঙ্গে নিজের জীবনকে জড়িয়ে নিয়েছেন। আটক হয়ে ৩৬ মামলায় ১৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top