আটকদের মুক্তি দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
গুম তদন্তের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩১ আগষ্ট ২০২৩, ০০:১৪
বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের প্রতি এ আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময় নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায়, কী অবস্থায় আছে তা তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান।
দেশের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৬০০ জনকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। আদালতে হাজির করার পাশাপাশি যদিও কিছু লোককে পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বলা হয়েছিল যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে অনেকেই মারা গেছেন, এছাড়াও প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়ার সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, বাংলাদেশে জোরপূর্বক নিখোঁজে ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর কষ্ট শুধু বাড়ছেই। সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সরকারের উচিত আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। পাশাপাশি একটি স্বাধীন কমিশন খোলা, যেখানে জাতিসংঘের সাথে এক হয়ে এমন গুমের ঘটনা বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে সরকার।
এদিকে গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে এ দেশে গুমের অভিযোগকে মানবাধিকারসংক্রান্ত অন্যতম ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গণমাধ্যমগুলো নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে গুম ও অপহরণের অভিযোগ তুলে ধরেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ ব্যক্তি গুম হওয়ার তথ্য দিয়েছে একটি বেসরকারি সংগঠন। নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম-বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে ৮১টি গুমের অভিযোগ তদন্ত করছে। তারা কোথায় আছে বা তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য নেই।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসেহ অনেকেই গুমের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। এ প্রসঙ্গে তারা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে গুম হওয়ার অভিযোগে ওঠে, তাদের অনেকেই ঋণ বা বিভিন্ন কারণে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হন। পরে আবার তারা ফিরে আসেন।
২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছেন সাধারণ লোকজনও।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স এগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস বলে ঘোষণা করা হয়।
২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তৎকালীন হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। সেসময় তিনি বিচারবর্হিভূত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেছিলেন, গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন এবং বিশেষ মেকানিজম তৈরি করতে আমি সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। স্বাধীন ওই কমিশন গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার, নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করবে। তিনি জানান, এ বিষয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক মানের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।