প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য জরুরি ছিল : এডিবি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী ২০২৪, ১৪:৩৯

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে মন্তব্য করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান তিনি। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এই কথা বলেন।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কেএম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গণভবনে বুধবার বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।

মুন বলেন, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘এডিবি খুবই খুশি।’

গিনটিং উল্লেখ করেন, এডিবি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, আগামী দিনেগুলোয়ও আমরা একই সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে সব সময় প্রস্তুত। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে জ্বালানি খাত ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আরও জানান, তারা কক্সবাজারে জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্পে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চান। প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য জেলাগুলোয়ও তাদের একই কাজ করার অনুরোধ জানান। 

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক খাতে মূল্য সংযোজন প্রকল্প গ্রহণের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় ক্রমাগত সহায়তা করার জন্য এডিবিকে ধন্যবাদ জানান। এডিবিকে গত বছরে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতিতে পৌঁছানোর জন্যও ধন্যবাদ জানান তিনি।

বর্তমানে এডিবি বাংলাদেশের অর্থনীতির সাতটি প্রধান খাতে ৬১টি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে পরিবহণ, পানি ও শহুরে অবকাঠামো, সেবা, জ্বালানি, মানব ও সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি, খাদ্য, প্রাকৃতিক ও গ্রামীণ উন্নয়ন, অর্থ, সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা এবং শাসন খাত রয়েছে।

শেখ হাসিনা এডিবিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গ্র্যাজুয়েশন চ্যালেঞ্জের চাহিদা পূরণে প্রকল্প হাতে নেওয়ার অনুরোধ করেন, যেখানে লজিস্টিক অবকাঠামোর উন্নতি এবং পরিষেবা সরবরাহকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি এবং জলবায়ু জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এডিবির জলবায়ু অর্থায়নের একটি বড় অংশ পাবে বলে আশা করে।

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১’তে উদ্ভাসিত জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ এবং ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এর সঙ্গে একই সঙ্গে জলবায়ু ফলাফলকে সমর্থন করার জন্য উচ্চমানের জলবায়ু প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলোর একটি পাইপলাইন বিকাশে বাংলাদেশের জন্য তার অনুদান এবং রেয়াতমূলক জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে এডিবিকে অনুরোধ করেন তিনি। একইসাথে এডিবির সাম্প্রতিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি এডিবিকে অবহিত করেন যে ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পাইপলাইনে বেশ কয়েকটি বাজেট সহায়তা রয়েছে যার ওপর এডিবি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তাদের অনুমোদন নিশ্চিত করতে আগেই আলোচনা শুরু করতে পারে।

তিনি আশা করেন, এডিবি বাংলাদেশের অগ্রাধিকার খাতগুলোয় অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে যাতে দেশের প্রবৃদ্ধির গতি বজায় থাকে এবং একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ ভবিষ্যৎ রূপকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করা যায়।তিনি বলেন, এডিবি তাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছে, তাই এটি কাক্সিক্ষত যে এডিবি এমন প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য বড় ধরনের সহযোগিতা দেবে, যা ডিজিটাল গ্যাপ কমিয়ে দেবে, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত করবে, উন্নত ও কম কার্বন প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে, সবুজ শক্তি উৎপাদন করবে, জলবায়ু-সহনশীল কৃষির সম্প্রসারণ ঘটাবে, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা এবং দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি ও বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাবগুলোর সার্বিক এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বছরের পর বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭৩ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি এডিবির প্রতিশ্রুতি ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে; যার মধ্যে ঋণের পরিমাণ ৩১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ৫৭১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ের মধ্যে, এডিবির মোট প্রদেয় ছিল ২৩.২ বিলিয়ন ডলার।

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top