খালাস চেয়ে রবিবার আপিল করবেন ড. ইউনূস
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:৪৬
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ৬ মাসের সাজার রায় বাতিল চেয়ে আপিল করবেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাজা থেকে খালাস পেতে তোলে ধরা হবে ২৫ যুক্তি। রোববার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে আপিল করবেন তিনি। একইসঙ্গে জামিনও চাইবেন। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) আইনজীবী মামুন বলেন, রবিবার সকাল ১০টার মধ্যেই ড. ইউনূসসহ আমরা আদলতে যাব। আপিল করার পাশাপাশি জামিন আবেদনও করা হবে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত যে জামিন দিয়েছিলেন, সে জামিনের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে বলে জানান এই আইনজীবী।
কী যুক্তিতে আপিল করা হবে জানতে চাইলে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষীদের জেরায় যেসব তথ্য, প্রমাণ, স্বীকারোক্তি রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেননি বিচারক।
তা ছাড়া ২০১৮ সালে গ্রামীণ টেলিকমের সার্ভিস রুল (প্রবিধানমালা) অনুমোদন করা সংক্রান্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিচালকের চিঠি মামলার প্রদর্শনীতে না থাকলেও তা আমলে নিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
শ্রম আইনের ৩১২ ধারা অনুসারে মামলায় কম্পানি অর্থাৎ গ্রামীণ টেলিকমের অপরাধ প্রমাণিত হলে পরে অপরাধে সক্রিয়ভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনার কথা। কিন্তু এ মামলায় গ্রামীণ টেলিকমকে বিবাদী না করে বিবাদী করা হয়েছে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দুই পরিচালককে। ফলে এ মামলা চলে না।
এ ছাড়া শ্রম আইনের যেসব ধারায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেসব ধারা এ মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ভুল প্রয়োগ করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের আইনজীবী বলেন, আমরা রবিবার আপিল করবো। আপিলের সব প্রস্তুতি চলছে। এসময় ড. ইউনূসসহ অন্যান্যরাও উপস্থিত থাকবেন। বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বাতিল করে এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন তিনি। আপিলে শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে সাজা মওকূফ করে চার আসামির খালাস চাওয়া হবে।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বলা হচ্ছে-এ মামলা করেছে শ্রমিক। কিন্তু আসলে তা করেছে সরকার। এ নিয়ে সারা বিশ্বের মিডিয়া কথা বলছে। সংশ্লিষ্ট রায় অবৈধ। সেটা বাতিল চেয়েছি আমরা। সেইসঙ্গে ড. ইউনূসের জামিন চাওয়া হয়েছে আপিল আবেদনে।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের স্থায়ী না করা, ছুটি নগদায়ন না করা, ৫ শতাংশ লভ্যাংশ না দেওয়ার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইনের দুই ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরেকটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ড. ইউনূসসহ ৪ জনকে।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগ আনা হয়।
গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লক্সঘন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে কোম্পানির চেয়ারম্যান, শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বাংলাদেশের শ্রম আদালত।
ইউনূসের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে শ্রম আইনের ৩০৩ এর ৩ ধারায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একই আইনের ৩০৭ ধারায় তাদের সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা।
গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে। ৮৪ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লক্সঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ড. ইউনুসকে আদালত থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনই ড. ইউনুস বলেন, ‘যে দোষ করিনি, সেই দোষের শাস্তি পেলাম।’
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।