‘নতুন ইতিহাস' ও ‘ভুল' শহিদ, লেখকের পাঠ্যবই

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯:৪৮

ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের মহান নেতাদের স্বীকৃতি, বাড়তি স্বীকৃতি, অস্বীকৃতির প্রশ্ন, এমনকি ২০২৪-এর গণআন্দোলনের শহিদদের তালিকায়ভুল নাম নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন৷ এবারের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নতুন তথ্যের মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা। যেমন নতুন তথ্য সংযোজন করা হয়েছে, তেমনি আগের বইয়ের তথ্য বাদও দেয়া হয়েছে। এটা প্রধানত ঘটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অবদানকে প্রধান করার চেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে পাঠ্য বইয়ে।

‘আমাদের চার নেতা'

তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' বইয়ে ‘আমাদের চার নেতা' নামে নতুন একটি অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। এতে চার নেতা হিসেবে স্থান পেয়েছেন পর্যায়ক্রমে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে প্রত্যেকের ছবিসহ তাদের সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

তাতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে বিবরণের একটি অংশে লেখা হয়েছে,"রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাওলানা ভাসানী অনেক অবদান রেখেছেন।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার মধ্যে আছে, "১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এতে পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার জন্য উজ্জ্বীবিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আটক করে পাকিস্তান কারাগারে বন্দি করে রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি ফিরে আসেন।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আমাদের চার নেতা'-র এই বয়ান একেবারে নতুন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর পর জাতীয় চার নেতার বিষয়টি সবার জানা।নতুন এই ‘আমাদের চার নেতা-'য় তারা নেই৷ তবে তারা বলছেন, ‘আমাদের চার নেতা-য়' স্থান পাওযা চারজনও যার যার ক্ষেত্রে ইতিহাস-স্বীকৃত।

‘একটা ‘কিংস পার্টি' আসছে, এটা হয়ত তারই প্রি-প্ল্যানের অংশ'

জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, "এখানে আসলে পলিটিক্যাল এজেন্ডার রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে। ইতিহাসকে ‘টর্চার' করার আমাদের যে অভ্যাস, ৫৩ বছরেও তার কোনো পরিবর্তন হলো না। ফলে এরপর আবার পরিবর্তন হবে। কিন্তু ইতিহাস তো এভাবে বারবার বদলায় না।”

ইতিহাসে মাওলানা ভাসানীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বিশ্লেষকদের কেউই অস্বীকার করছেন না। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর পর্যায়ে বা তার চেয়েও বেশি করে তাকে দেখানোর প্রবণতার সমালোচনা করছেন তারা৷ এ প্রসঙ্গে ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, "এই অঞ্চলে একজন ফাউন্ডিং ফাদার বা আইডিয়ালিস্টিক কাউকে দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে হয়।

আমরা তো জানি একটা ‘কিংস পার্টি' আসছে। আমার মনে হয় সেটারই একটা প্রি-প্ল্যানের অংশ হিসাবে মাওলানা ভাসনীকে এভাবে সামনে আনা হচ্ছে। আমরা জানি, মাওলানা ভাসানী অবশ্যই বড় পলিটিক্যাল ফিগার। তাকে নিয়ে আলাদা লেখা থাকতেই পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাকে তুলনায় টেনে আনা হবে?”

নতুন প্রকাশিত ৫ম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়' বইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম অংশের প্রথমে রয়েছে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এরপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছবিও আছে। পুরোনো বইয়ে একই স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় এই চার নেতার ছবি ছিল।

‘মুক্তিযুদ্ধ তো শেখ মুজিবের নামেই হয়েছে'

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তো শেখ মুজিবের নামেই হয়েছে। তার নামই তো বার বার এসেছে। তিনিই তো জাতিকে ওই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে অন্য কারো অবদানকে তুলনায় নিয়ে আসা সমীচীন নয়। ইতিহাসে যার যার অবদান নির্দিষ্ট আছে। মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদান ছোট করে দেখা উচিত না।”

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তো শেখ মুজিবের নামেই হয়েছে

নতুন বইয়ে একই অধ্যায়ের ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা' শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট'। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।''

পুরোনো বইয়ে ইতিহাসের এই অধ্যায় সম্পর্কে লেখা ছিল, ‘‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট'। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।''

‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়' বইয়ে থাকা ‘আমাদের জাতির পিতা' অধ্যায়টি এবারের পাঠ্যবইয়ে নেই। চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়' পাঠ্যবইয়েও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি রয়েছে। এই বইয়ে ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক লেখায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবির পাশাপাশি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার ছবি স্থান পেয়েছে।

‘রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব দিয়ে ইতিহাস হয় না, তাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন, "১৯৭১ সালের কথা বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর কথা আসবে। তাজউদ্দীনের কথা আসবে, জাতীয় চার নেতার কথা আসবে। আরো অনেকের কথা আসবে। কিন্তু কারুর অবদান ছোট করে কাউকে বড় করে দেখানোর প্রবণতা উদ্দেশ্যমূলক। আবার ওই সময়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, রাজাকার আলবদর, আলশামসসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের কথাও আসবে।”

তার কথা, "ইতিহাসে যারা যে অবস্থান তা তাকে দিতে হবে। আপনি কাউকে বাড়িয়ে দেবেন না, কাউকে কমিয়েও দেবেন না। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব দিয়ে ইতিহাস হয় না। যারা এটা করেন, তাদের বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।”

শহিদের তালিকায় অজ্ঞাত ব্যক্তি

বাংলা ও ইংরেজি বইয়েও এসেছে পরিবর্তন। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয় ও নতুন কিছু গল্প, কবিতা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই'-এ ‘আমরা তোমাদের ভুলব না' শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ছাপা বইয়ে কয়েকজন শহিদের নামের সঙ্গে ‘নাহিয়ান' নামে একজনও রয়েছে। তবে এই নামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেউ শহিদ হয়েছেন বলে কারো জানা নেই। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণে পরে ভুলটি সংশোধন করে নাহিয়ান বাদ দিয়ে ‘নাফিসা' নামটি যুক্ত করা হয়েছে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের কথা, "মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ২০২৪-এর অভ্যুত্থান হয়েছে। এগুলোও বইয়ে থাকবে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, মুক্তিযুদ্ধকে আপনি কোণঠাসা করে অন্য কোনো ঘটনাকে বড় করে দেখাবেন। তাহলে আমাদের এই প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে না। তারা বিভ্রান্ত হবে৷''

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "অতীতের সরকারগুলো ইতিহাস বিকৃত করেছে। এই সরকারও যদি সেই পথে হাঁটে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাহলে আবারো পরির্তন করতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতিহাস হয় না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো কিছু করলে তা টিকবে না।”

নতুন পাঠ্যপুস্তক ও জাতীয় ঐক্য

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি ইনক্লুসিভ রাষ্ট্র ও সমাজের কথা সামনে আনা হয়েছে৷ অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিক বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। তবে এবারের পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক জাতীয় ঐক্য স্থাপনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকদের সংশয় রয়েছে। তারা মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত বিষয়গুলোকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করায় বরং জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়েছে৷

অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য তো অনেক দূরের ব্যাপার, শিক্ষার্থীরা বারবার বিভ্রান্ত হবে। অশিক্ষার চাইতেও খারাপ ভুল শিক্ষা। জাতীয় ঐক্য তো তার পরের ব্যাপার। তার আগেই তো শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাবে।” তার কথা, "আসলে এসব সরকারের ইচ্ছায় হয়। গত সরকার বেশি করেছিল। এই সরকার আরো বেশি করছে। ইতিহাস তো একটা সত্য ঘটনা। এটা তো কোনো ব্যক্তি বা সরকারের ইচ্ছায় হতে পারে না।” ‘‘সংস্কার করা যেতো এবং তার প্রয়োজনও আছে। কিন্তু যা করা হলো, তার কোনো প্রয়োজন ছিল না,” বলেন তিনি।

অধ্যাপক মজিবুর রহমান মনে করেন, "সঠিক শিক্ষা আর সঠিক ইতিহাসই জাতিকে ঐক্যের পথে নিয়ে যায়। ইচ্ছেমতো ইতিহাস পরিবর্তন করে এটা হয় না। আর যে শিক্ষা বারবার শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে, তা তো আর ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে না।” তিনি বলেন, "প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিমার্জন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে করতে গিয়ে অর্থ আর সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি।”

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, " জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হলো মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে জাতীয় ঐক্য হতে পারে না।”

‘পরিমার্জন' কারা করলো?

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, তারা ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আগের সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালেরশিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দিয়েছে। এজন্য এনসিটিবি ৪১ জন বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে।

কিন্তু অভিযোগ আছে, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটিতে এবার ছিলেন না নতুন বইতে এমন কারো কারো নামও ব্যবহার করা হয়েছে। তাদেরই একজন অধ্যাপক ড. শোয়াইব জিবরান। তিনি বলেন, " ইতিহাসের তথ্য নিয়ে কী করা হয়েছে নতুন বইতে তা নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না। কিন্তু আমি তো এবার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কসিটিতে নাই। এর আগের কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু এবারকার বইয়ে আমরা নাম দেয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক।”

তার কথা, "সরকার যেরকম ইচ্ছা, সেরকম নতুন বই করেছে। সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু যারা পরিমার্জন করেছেন, বইয়ে তাদের নাম থাকা উচিত ছিল। আমি যা করিনি তাতে আমার নাম থাকবে কেন?”

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটা একেবারে নতুন বই নয়, পরিমার্জন করা হয়েছে। খুব বেশি পরিবর্তন করা হয়নি। যারা এটা করেছেন, তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আরো অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন। তারা অল্প সময়ে এই কাজ করেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না। তবে এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। আরো কাজ হবে ভবিষ্যতে।”

ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধু ও মাওলানা ভাসানী প্রশ্নে তিনি বলেন, " যারা পরিমার্জন করেছেন, তারা এই বইগুলোর মূল লেখক না হলেও তাদের অনেক কাজ আছে। তারা ইতিহাসহ শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। তারাই এটা করেছেন। এটা নিয়ে আপনারা লিখতে পারেন, আলোচনা করতে পারেন, তখন হয়তো তারা এটা দেখবেন।”

আর ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সমান্তরালে নিয়ে আসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, " না, এবার পাঠ্যপুস্তকে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস দেয়া হয়নি। আসলে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে দেয়া হয়েছে সহিত্যের আঙ্গিকে। এরমধ্যে ইতিহাসের বিষয়টা আছে, তবে সেটা মানবিক আবেদনের। একাত্তর পরবর্তী ইতিহাস কিন্তু আমরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ে ওভাবে আনিনি।”

তবে ড. শোয়াইব জিবারান বলেন, " আমার বিবেচনায় ইতিহাসের ঘটনা বাংলা বইয়ে না এনে ইতিহাসের বইয়ে আনা ভালো।” পাঠ্যপুস্তকে এবার পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি বাদ দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ও নানা ধরনের বাণী যুক্ত করা হয়েছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top