ফেসবুক লাইভে বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদকের দাবি
ওবায়দুল কাদের, শেখ হেলালকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করলেন কে?
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪:৪৩
যশোর জেলা যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনির ফেসবুক লাইভে ও স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের পরিবারকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করার বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জেলা যশোর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের লাইভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ে গেছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’।
মঙ্গলবার তিনি ফেসবুকে লাইভে ও স্ট্যাটাস দিয়ে দলটির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিযোগ তদন্তেরও অনুরোধ করেছেন।
ফেসবুক লাইভে জনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা’।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এসকেন্দার আলী জনি তার ফেসবুকে লেখেন: ১৩ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে যশোর জেলা যুবদলের সেক্রেটারি আনসারুল হক রানা, মাদক সম্রাট শহীদের সহায়তায় পুটখালি ঘাট দিয়ে শেখ হেলালসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পার করে দিয়েছে সেটা গোয়েন্দার কাছে তথ্য আছে।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে এসকেন্দার আলী জনি ফেসবুক লাইভ করেন। লাইভের শিরোনামে তিনি লিখেছেন: ‘সঠিক তদন্ত চাই, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা জনাব তারেক রহমানের কাছে বরাবর। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে যশোর জেলা যুবদলের সেক্রেটারি, সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করুন অরজিনাল অপরাধীদের শান্তি দিন।’
ফেসবুক লাইভে ২৭ মিনিটের ভিডিওতে এসকেন্দার আলী জনি অভিযোগ করেন, ‘যশোর ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৫ তারিখের পর তাকে ভারতে পালাতে সাহায্যে করেছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। বেনাপোলের পুটখালির গোল্ড নাসিরের সাথে (সিঙ্গাপুরে) টাকা ভাগাভাগি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘাট শহিদকে ধরলে এতথ্য পাওয়া যাবে। শুধু ওবায়দুল কাদের নয়; আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে ভারতে যেতে সাহায্য করেছে যশোর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। এতথ্য সব নেতাই জানে। এখন যশোর যুবদল দেখলে মনে হবে যুবলীগ হেঁটে যাচ্ছে। যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা দলকে যুবলীগে পরিণত করেছে।’
ফেসবুক লাইভে তিনি আরও বলেন, আমি রাজপথে মার খেয়েছি, আমার ভাই মার খেয়েছে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্¿ের কারণে পরিবারসহ জেল খেটেছি। আমি ১৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার ও ত্যাগী নেতা হয়েও আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি আন্দোলন সংগ্রাম করবো; ত্যাগী নেতাদের কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে। যুবদলের নেতাকর্মী জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে মিছিল করেছে। ভিডিওসহ নেতৃবৃন্দের জানানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গোপনে যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের সাথে মদের ব্যবসা করেন। যুবদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দলে নিয়ে এসেছেন। যারা বিএনপি অফিস ভাংচুর করেছে, দলের নেতাদের ছবি ভাংচুর করেছে, তারা এখন যুবদলে। এখন যুবদলের সভাপতি-সম্পাদক বলছেন ৫/৭ কোটি টাকা খরচ করে কমিটি নিয়ে আসবেন।’
বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি ফেসবুক লাইভের বক্তব্য নিশ্চিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের কাছে সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি এবং তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বলেন, ‘এসকেন্দার আলী জনির অভিযোগ হাস্যকর। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যই জনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে শুধু আমাকে নয়, যুবদলের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি দু’জনের নামেই দীর্ঘদিন ধরে এসব বলে আসছে। সে সুস্থ নয়।
আপনারাও তদন্ত করে দেখেন, সে (ওবায়দুল কাদের) কোনদিক দিয়ে কোথায় গেছে। স্বৈরাচার হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের কবে, কীভাবে পালিয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তদন্ত করছে। আমার সংশ্লিষ্টতা থাকলে তো এতদিনে গ্রেপ্তার হয়ে যেতাম। একজন একটা কথা বললেই তো হবে না। এতদিন ধরে রাজনীতি করলাম, খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আমরা কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত কি-না।’
জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ বলেন, ‘জনি নেশাগ্রস্ত ছেলে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় জেলা বিএনপি ও জেলা যুবদলের সুপারিশে কেন্দ্রীয় যুবদল তাকে বহিষ্কার করেছে। সে উন্মাদ হয়ে গেছে। উন্মাদ ও বহিষ্কৃত লোক কি বলল, সেটি আমলে নিচ্ছি না। আমলে নেওয়ার দরকার নেই। আমরা কেমন লোক যশোরের মানুষ জানে। ১৮ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ৩৫ থেকে ৪০ বার জেল খেটেছি।’
প্রসঙ্গত, নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনিকে বহিষ্কার করা হয়। সূত্র: ইত্তেফাক
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।