বৃহঃস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন জেনেভায় উপস্থাপন, কী বললেন তুর্ক

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৯

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘবদ্ধভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি জেনেভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় বুধবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সেখানেই জুলাই অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে আসে।

অনুষ্ঠানটি জেনেভা থেকে সংস্থাটির ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ভলকার তুর্ক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দলের সহযোগীরা সংগঠিত ও পদ্ধতিগতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন।

বাংলাদেশে জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার সংস্কারের লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে অনুসন্ধান এবং সুপারিশ নিয়ে সংলাপ হয়। এই সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময় তিনি বলেন, মূল বিষয়টি হলো বিক্ষোভ দমাতে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং তৎকালীন শাসকদলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সুসংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিলেন। এ বিষয়টি বিশ্বাস করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।

ভলকার তুর্ক বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা জেনেছি যে বিক্ষোভ দমনের বিষয়টি সাবেক রাজনৈতিক নেতারা জানতেন এবং এতে তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনা ছিল।

তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময় একটি হাসপাতালে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আমার দেখা করার সুযোগ হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ এবং শিশুসহ বহু মানুষকে আমি দেখেছি।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার প্রথম টেলিফোনে কথোপকথনের কথা তুলে ধরেন তুর্ক। বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাকে বলেছিলেন যে সংস্কার এবং উত্তরণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবাধিকার। অবশ্যই এটি কঠিন কাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি সহজ নয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, এটাই সঠিক চেতনা এবং তাদের সকলেরই সুযোগটি গ্রহণ করা এবং পরিবর্তনের এই সুযোগকে সমর্থন করা উচিত।

সোমবার ভলকার তুর্ক আশাপ্রকাশ করেন, তাদের স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রকৃত ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এটি জবাবদিহিতা, ক্ষতিপূরণ এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও সংস্কারকে সমর্থন করবে।

জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার তদন্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তুর্ক বলেন, গত বছর বাংলাদেশ সহিংসতায় ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তৎকালীন সরকার ছাত্র আন্দোলনকে ‘নৃশংসভাবে দমনে’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তিনি আরও বলেন, দেশটি এখন একটি নতুন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন এক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রাখবে।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top