সমাজে নারীকে খাটো করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৬

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের সমাজে নারীকে খাটো করে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটি পাল্টাতে হবে। তা না হলে, আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারবো না। শনিবার (৪ মার্চ) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, এটি তার সম্পূর্ণ বিপরীত।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এই ‘নতুন বাংলাদেশে’ নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা আমাদের সব শক্তি প্রয়োগ করে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।”
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে। কয়েকদিন আগে তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আয়োজিত "তারুণ্যের উৎসব ২০২৫"-এ রেকর্ডসংখ্যক নারীরা ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি খেলায় অংশ নিয়েছে। এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়েরা প্রায় তিন হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ দর্শকসারিতে বসে তাদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। হাজার হাজার দর্শকের এমন উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের সমাজে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।'
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “নারী-বিরোধী যে শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাকে আমরা দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই মোকাবিলা করবো। তাছাড়া, আমাদের সমাজে এখনও এমন বহু মানুষ আছে যারা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাদের খাটো করে দেখে, অবজ্ঞার চোখে দেখে। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে, বৈষম্যহীন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নারীর পাশে দাঁড়ানোর, তাদেরকে সমর্থন জানানোর, কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি বলেন, 'পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদের এখন ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেমনটা আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ সজাগ থাকুন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন।'
ড. ইউনূস বলেন, 'আজকের বিশ্বে নারীরা যতটুকু অধিকার আর স্বাধীনতা চর্চা করতে পারছেন এর পুরোটাই তাদের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নিউইয়র্কের নারী শ্রমিকরা কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন বৃদ্ধি ও ভোটের অধিকারের দাবিতে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন। অধিকার আদায়ের জন্য আহত ও নির্যাতিত হন।'
'বাংলাদেশেও নারীরা ন্যায্য অধিকারের জন্য যুগযুগ ধরে সংগ্রাম করে এসেছে। তেভাগা থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারীসমাজ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ইতিহাসের অনেক বীর নারীদের আমরা ভুলে গেছি, তাদের অবদানের কথা জানি না। কিন্তু জুলাই কন্যাদের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের কথা আমরা কিছুতেই ভুলে যেতে দেব না', বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরা বিভিন্ন সময়ে আমাকে তাদের সংগ্রাম ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া তা সম্ভব হবে না। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের সঙ্গে পুরুষদেরও সহযোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'সমাজে নারীদের ন্যায্য স্থান প্রতিষ্ঠার জন্য পুরুষদেরকে উৎসাহী সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। "নতুন বাংলাদেশ"-এ আমরা আমাদের প্রত্যাশী পরিবারকে নতুনভাবে গড়তে চাই। যেটা সব বাবা-মার, ভাই-বোনের নিশ্চিত ও স্বীকৃত অধিকারের পরিবার।'
'আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের নতুন করে নারীদের সংগ্রামের ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়, অনুপ্রেরণা আর সাহস যোগায়। সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, যত বাধাই আসুক না কেন ইতিহাস আমাদের যে সুযোগ করে দিয়েছে। সে সুযোগ আমরা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করবোই। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বই। এই আমাদের প্রতিজ্ঞা', বলেন তিনি।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।