ক্ষুদ্রঋণ ও সুদ কারবারিদের নিয়ে ফের হাইকোর্টের রুল
বার্তাকক্ষ | প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৫, ১৭:৩৪

লাইসেন্স বা অনুমোদন ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ কারবারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সমবায় সমিতি এবং স্থানীয় সুদ কারবারি ও দাদন ব্যবসায়ীদের আর্থিক কর্মকাণ্ড কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
অর্থসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি)সহ ১০ জন বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম।
হাইকোর্টে রিটটি করেন খুলনার বটিয়াঘাটা থানার মাইলমারা গ্রামের বাসিন্দা ও চড়া সুদের ভুক্তোভোগী শচীন্দ্র নাথ শীল। রিট আবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে তার স্ত্রী জ্যোৎস্না সরকার কয়েক দফায় স্থানীয় কারবারিদের কাছ থেকে চড়া সুদে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। সেই ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পরে আবারও ঋণ করেন।
এভাবে তার স্ত্রী স্থানীয় সুদ কারবারিদের ঋণ ও সুদের জালে জাড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সুদ কারবারিদের মামলার ফাঁদেও পড়েন জ্যোৎস্না। এ অবস্থায় চড়া সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চেয়ে ২০২৩ সালের ২ মে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন রিট আবেদনকারী শচীন্দ্র নাথ শীল। ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যানের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
আইনজীবী ফরহাদ বলেন, ‘রুল জারির পাশাপাশি একটি নির্দেশনাও দিয়েছেন হাইকোর্ট। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যানকে শচীন্দ্র নাথ শীলের আবেদনটি দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
চড়া সুদের ঋণ প্রথা নিষিদ্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ওই বছর ২৮ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চড়া সুদে ঋণের জালে কৃষকেরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিটটি করেছিলেন তিনি।
এই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর আদালত রুলসহ আদেশ দেন। যেসব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়া ক্ষুদ্রঋণের কারবার করছে, সেসব সংগঠন-প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সেই সঙ্গে অনুমোদনহীন ক্ষুদ্রঋণের কারবার নিয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্ট আদেশে বলে দেন, তদন্তের সময় যদি অননুমোদিত বা অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণ কারবারি সমবায় সমিতি, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। আর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয় স্থানীয় পর্যায়ে সুদ কারবারিদের তালিকা দিতে।
লাইসেন্স বা অনুমোদন ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ কারবারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- জানতে চায়া হয় রুলে। অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা অদিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন দিলেও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আদালতে কোনো প্রতিবেদন দেয়নি। পরে বাংলাদেশের ব্যাংকের প্রতিবেদন দেখে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশ অনিবন্ধিত, অননুমোদিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, সুদ কারবারি ও দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভুক্তোভোগী বা সাধারণ মানুষ যাতে অভিযোগ দিতে পারে, সে জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ‘অভিযোগ বক্স’ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংককে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।