বিশ্ব রাজনীতিতে চীন অন্যতম সুপার পাওয়ার। মহা অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ। বিশ্বে খুব কম দেশ আছে যারা চীনের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে থাকা দেশগুলোর জন্য চীন সফর রীতিমতো টনিক।
বুধবার (২৬ মার্চ) চারদিনের সফরে চীন যান ডক্টর ইউনূস। সেই সফরকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মহলে চলছে নানা রকম আলোচনা। যার ফলে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসন আমলে অর্থনৈতিক, সামরিকসহ প্রায় সব খাতেই ভারতনির্ভর ছিল। সেই নির্ভরতা থেকে ধারাবাহিকভাবে বাহিরে আসার চেষ্টা করছেন ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে রয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের বিগত বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সৌহার্দ্য দেখা গেলেও হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এখনো স্পষ্ট নয়।
একদিকে ভারতের সঙ্গে চীনের আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রশ্নে বিদ্বেষ রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বৈরিতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আরও জমাট হয়েছে। সে কারণে চীনে ইউনূসের সফর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়েও আলোচনা আছে।
তবে সব আলোচনা ছাপিয়ে ড. ইউনূসের চীন সফরের প্রাপ্তি কী? সেটাই এখন আলোচনায়। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার চারদিনের চীন সফরের তৃতীয় দিনে দুদেশের মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুদেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা।
এর পাশাপাশি, প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপাক্ষিক চীন সফরে দুদেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে। এগুলো হলো- বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
ডক্টর ইউনূস দেশে ফিরলে এই সফর থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির সমীকরণ বেশ জটিল।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।