ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কে এই আসিফ মাহাতাব উৎস?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০২৪, ১৯:১০

ছবি: সংগৃহীত

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে নিয়ে চলছে তোলপাড়। সামাজিক মাধ্যমে এখন আলোচিত টপিক এই শিক্ষক। সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে হিজড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে করা একটি অধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করেন এই শিক্ষক। কে এই আসিফ মাহাতাব উৎস। কি তার পরিচয়। চলুন জেনে আসি।

আসিফ মাহাতাব ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১০ সালে ‘ও’লেভেল এবং ২০১২ সালে ‘এ’লেভেল পাস করেন। ২০১৩ সালে ইংরেজি বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে ২০১৭ সালে অনার্স কোর্স শেষ করেন।

এরপর ২০২৯ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোতে Master of Science in Analytical Philosophy বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন। ২০২০ সালে মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে Integration of Theism in Hobbes’s State of Nature বিষয়ে গবেষণা করেন।

তিনি পাবলিক স্পিকার হিসেবে পরিচিত। ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে সরব হয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধ বিষয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ২০১২ সালে তিনি ‘অন্য কথা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।

আসিফ মাহাতাব উৎস ২০১৮ সাল থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টারে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি ২০১৯ সালে মাস্টারমাইন্ড স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তারপর তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি ব্র্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।

গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে এই সম্মেলন হলেও এখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। 
 
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এসময় তিনি এই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। এ দৃশ্যের একটি ভিডিও মাহতাব তার নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপর সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

এই ঘটনার পরই সামাজিক মাধ্যমে আসিফকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। মঙ্গলবার সকালে তারা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা প্রধান গেটে এসে জমায়েত হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নিজেদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে। 

এদিকে,  মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি। ওই ৭ লাইনের পোস্টে তিনি ১০টি বানান ভুল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তার পোস্টের নিচে নানা ধরনের কমেন্টও করেছেন। এতে তার শিক্ষকতার জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

তবে এই শিক্ষকের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার যোগ্যতাই রাখেন না। কবি আখতারুজ্জামান আজাদ শিক্ষক আসিফ মাহতাবের একটি পোস্টে ১২ টি পয়েন্টে ভুল ধরেন। 
 
আসিফ মাহতাব তার পোস্টে লেখেন, ‘আমার কন্ট্রাক্ট যদি রিনিউ নাই করাহবে তাহলে আমাকে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মিটিং , কাররিকুলাম ডেভেলপমেন্টের কাজ কেন করানো হলো?  সবচে মজার বেপার হচ্ছে আমার কোর্স রিনিউ করা হয়নি ভালো কথা, তো আমাকে দিয়ে একটা ক্লাস কেন নোয়ানো হলো? 
 
ইমেইল ডিএক্টিভেট করেছেন ভালো কথা, কিন্তু আমি তার আগের রাতেই প্রমান রাখার জন্য আমাদের অফিসিয়াল এমাইলস যেখানে আমাকে ক্লাস দাওয়াহ হয়েছে, কাজ করানো হয়েছে সব আরেকটি ইমেইল এ সেন্ড করি।’
 
এই পোস্ট নিয়ে আখতারুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘এত ছোট একটা লেখায় সপ্তম শ্রেণির কোনো ছাত্রেরও এত ভুল করার কথা না। কারওয়ানবাজারের 'মহানগরী হাঁস-মুরগি বাজারজাতকরণ সমবায় সমিতি'র আপ্যায়নবিষয়ক উপ-সম্পাদক এ জাতীয় ভুল করলে মানা যায়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক এই কাজ করলে এসএসসির সনদ বাতিল করে তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে।’

একই পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে একাদ্ধিক নেটিজেন বলছেন, উনার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার আগে বানান ভালো করে শেখা উচিত। তবে নেতীজেনদের একাংশ বলছেন, একটি পক্ষ শিক্ষক আসিফ মাহতাবের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে, অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে নিয়ে আসছে তারা।  

এই প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে আসিফ মাহতাবের ফেসবুকের পুরনো বেশকিছু ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। ওইসব ছবিতে আসিফকে দেখা গেছে বান্ধবীদের সঙ্গে। যেখানে আসিফ বলছেন, চলো একসঙ্গে লড়াই করি। একটি ছবিতে শিক্ষক আসিফের হাতে পানীয়র গ্লাস দেখা যায়। এসব ছবি ছড়িয়ে নেটিজেনরা আসিফের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, বলছেন কাসিফ দ্বৈত আচরণ করছেন।

 

 



 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top