ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:২৩

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত একটি বিষয় ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী। চিকিৎসার মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের এই নামে ডাকা হয়। বর্তমান বিশ্বে এটির জন্য আন্দোলন-সংগ্রামও করছে একদল মানুষ। ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রসঙ্গে দেশ যখন তোলপাড়। তখন বিষয়টি নিয়ে ইসলামের অবস্থান কী। চলুন কিঞ্চিৎ আলোচনা করি:

ট্রান্সজেন্ডারবাদ বা রূপান্তরকামিতার সংজ্ঞা মতে, একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয়, তাহলে সে একজন নারী। একইভাবে কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ হিসেবে বিবেচিত হবে। তারা চিকিৎসার মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করার অধিকার রাখে।

ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া মোটেও এক নয়। ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলন মোটেও হিজড়া বা জন্মগত তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ের আন্দোলন নয়। এই দুটি জিনিস একেবারেই আলাদা।

যাদের দেহ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, তারা পুরুষ আর যাদের দেহ ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, তারা নারী। এটা শুধু বাহ্যিক অঙ্গপ্রতঙ্গের বিষয় নয়, পুরো প্রজননব্যবস্থার বিষয়। সুতরাং এখন যারা জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক এবং কিছু যৌন ত্রুটি বা জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তারা হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ। ইংরেজিতে বলা হয় ইন্টারসেক্স।

ট্রান্সজেন্ডাররা ইন্টারসেক্স নয়, তারা সম্পূর্ণরূপে পুরুষ বা নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে এবং পরে ওই লিঙ্গের প্রতি অসন্তুষ্টির কারণে লিঙ্গ পরিবর্তন করে।

ট্রান্সজেন্ডারবাদ বা রূপান্তরকামীতা নামে একটি মতবাদ রয়েছে। অনেকে একে জেন্ডার আইডেন্টিটি বা লিঙ্গ পরিচয় মতবাদও বলে থাকেন। এই মতবাদ বলে- কোনো পুরুষের যদি ‘নিজেকে নারী বলে মনে হয়’ তাহলে সে একজন নারী। একইভাবে কোনো নারীর যদি ‘নিজেকে পুরুষ মনে হয় তাহলে সে একজন পুরুষ।

এই মতবাদে বিশ্বাসীদের দাবী- মানুষ ইচ্ছেমতো পোশাক পরবে, ইচ্ছেমতো ওষুধ আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বদলে নেবে নিজের দেহকে। আর কেউ যদি অস্ত্রোপচার না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের দাবী করে, তা-ও মেনে নিতে হবে। এটা তার অধিকার।

ট্রান্সজেন্ডারবাদে বিশ্বাসীদের বিভিন্ন লেখায় দেখা যায়, কোনো ছেলের অনুভূতি যদি মেয়ের মতো হয় এবং তার যদি মেয়ে হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে হয় তাহলে বুঝতে হবে শরীরটা আসলে তার নয়।

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে অন্যতম হো চিন মিন ইসলাম। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠায় আইন তৈরির দাবিও জানিয়ে আসছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার শরীরটা পুরুষের ছিল, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে নারী ভাবতাম। অবশেষে অস্ত্রোপচার করে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই। এখন আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন নারী।

বিশ্বজুড়ে এই মতবাদের প্রচার-প্রসার চলছে। বিচিত্র এই মতাদর্শকে উপস্থাপন করা হচ্ছে নাগরিক ও মানবাধিকারের প্রশ্ন হিসেবে।

অনেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারদকে গুলিয়ে ফেলেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার নিশ্চিতে ইসলামে বিধান রয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নয়। বরং তারা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তি অথবা লিঙ্গ পরিবর্তন ছাড়াই মানসিক দিক থেকে সৃষ্টিগত লিঙ্গের চেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আসক্ত ব্যক্তি।

সেজন্যই রাসূলুল্লাহ (স.) দৈহিক বৈশিষ্ট্য পুরুষের কাছাকাছি এমন ‘হিজড়াদের পুরুষ ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য নারীদের কাছাকাছি এমন ‘হিজড়াদের নারী হিসেবে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে বাইহাকি কুবরা: ১২৯৪)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে। (সুরা : ত্বিন, আয়াত: ৪)

হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে (তিরমিজি: ২৭৮২)।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৮৫)

তাফসিরে কুরতবিতে ইমাম কুরতবি (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে কোনোরূপ পরিবর্তন করা নাজায়েজ। (তাফসিরে কুরতুবি: ৫/৩৯৩)




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top