বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খোলস পাল্টিয়ে ছাত্র শিবিরের নেতারা এখন প্রকাশ্যে

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:০০

ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। বের হয়ে আসছে অনেক তথ্য। পক্ষে- বিপক্ষে হচ্ছে নানান আলোচনা- সমালোচনা। যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। তখন ছাত্রশিবিরের ছেলেরাই পরিচয় গোপন করে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা আন্দোলন চালিয়ে যান। এটা এখন গোপন নয় বরং ক্রমশ প্রকাশ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ইস্যুতে যখন দেশ তোলপাড়। তখন দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রম না চালাতে পারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। ছাত্র আন্দোলনে তাদের ভূমিকা সামনে আসছে।

কোটা সংস্কার ইস্যু থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার পতনের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ৯ দফার ঘোষক আব্দুল কাদের বিষয়টি সামনে আনেন।

কাদেরের ভাষ্য, ৯ দফা প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রশিবির। যেহেতু নেট নেই, গোলাগুলি-কারফিউয়ের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে হাউসে হাউসে পৌঁছে দিয়েছে, বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা তারাই করেছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ফরহাদের সাথে আলোচনা করে এই ৯ দফা তৈরি হয়েছিল বলেও জানান এই সমন্বয়ক।

তবে কাদেরের এই ঘোষণার আগেই সামনে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমের নাম। গত শনিবার ফেসবুকে এক পোস্টে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে নিজেকে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাদিক কায়েম। এরপর থেকেই শুরু হয় ছাত্রশিবিরকে নিয়ে আলোচনা।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন আবু সাদিক কায়েম। সমন্বয়কদের তালিকায় নাম না থাকলেও তিনি সরব ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের পাশেই। অন্তর্র্বতী সরকার গঠন-পরবর্তী সময়ে সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা।

সাদিক খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদরাসা থেকে দাখিল এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সাদিক কায়েম পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি, হিল সোসাইটি সাবেক প্রতিষ্ঠাতা, সেভ ইয়ুথ-স্টুডেন্টস অ্যাগেইন্সট ভায়োলেন্সের সাবেক ফ্যাসিলিয়েটর, সূর্যসেন হল অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল সায়েন্সের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ইনিশিয়াটিভ-বিওয়াইআইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে স্ট্যাটাস দিয়ে এক মন্তব্য করেন সাদিক কায়েম। লিখেন, ফ্যাসিস্ট শোষণ শুধু ছাত্র রাজনীতি নয়, রাজনীতির সংজ্ঞাই পালটে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি থাকে না। বিরাজনীতি ফ্যাসিবাদের ভাষা। ফ্যাসিবাদ ছাড়া সব বাদ, ইজম ও রাজনীতি ফ্যাসিবাদে অনুপস্থিত থাকে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি নাই, শুধু ফ্যাসিবাদই আছে। টেন্ডারবাজি, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ফাঁসি, ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি এসব রাজনীতি না। এগুলো ফ্যাসিবাদ।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গত ষোল বছরের ভয়ংকর দিনগুলো কিংবা তারও পূর্বের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো রাজনীতির প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। কিন্তু চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সব ভুল ভেঙে দিয়েছে। রাজনীতি সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন সচেতনতা। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর যখন ঢাবি ছাত্রশিবির শাখার কথা প্রকাশ্যে এলো তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন, এতো বছর ঢাবিতে ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে আসলে ছিলেন কারা। এমন প্রেক্ষাপটে এবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন শিবিরের ঢাবি শাখার বর্তমান ও আগে দায়িত্ব পালন করা নেতারা।

ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি সাদিক কায়েম প্রকাশ্যে আসার একদিন পর প্রকাশ পায় সেক্রেটারি নাম। শেখ হাসিনা পতনে ছাত্রশিবিরের সাহসী ভূমিকা প্রকাশ করতে গিয়ে আব্দুল কাদের জানান, ঢাবি ছাত্রশিবির শাখার বর্তমান সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ।

ফরহাদের ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আসার পর আরেকটি পরিচয়ও সামনে এসেছে। সেটি হলো তিনি ২০২২ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়ে ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা দেখা গেছে। ওই কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর তালিকায় তার নাম দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ সেশনে তিনি জসীম উদদীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। বর্তমানে এস এম ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছে গণমাধ্যম। জানা যায়, সংগঠনটির ঢাবি শাখা কখনই নেতৃত্বহীন ছিল না। প্রতিবছরই কমিটি গঠন হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে এখন সময় এসেছে সবাইকে সামনে আনা হবে।

জানা যায়, ২০২২-২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন সিবগাতুল্লাহ। বর্তমানে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি। এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সিবগাতুল্লাহ। বর্তমান ঢাবি শাখার নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রের নিয়মিত যোগাযোগ এবং আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি সবটুকুই তিনি সমন্বয় করেন। সিবগাতুল্লাহর সঙ্গে সে সময় সেক্রেটারি ছিলেন শাহিনুর রহমান।

প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। নানাজন করছেন নানান মন্তব্য। সদ্য ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতূহল।

৯ দফায় সাদিকের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ ইশরাক নামে এক নেটিজেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনে ৯ দফা প্রণয়নে তার ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। এরপর তা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

মোহাম্মদ ইশরাক লেখেন, নেট বন্ধ হওয়ার রাতে ৯ দফা ঘোষণা হয়। প্রথমে এটা ছিল ৮ দফা। আমাদের পরামর্শ ছিল যে এমনভাবে দফাগুলি দিতে হবে যাতে দাবীগুলি যৌক্তিক মনে হয় কিন্তু হাসিনার পক্ষে মানা অসম্ভব হয়। এর ফলে এক নম্বর দফায় হাসিনাকে হত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। অন্যসব দফা মেনে নিলেও হাসিনার পক্ষে এই দফা মেনে নেওয়া সম্ভবই ছিল না। কারণ হত্যার দায় স্বীকার করলে প্রধানমন্ত্রীত্ব থাকবে না, দেশে-বিদেশে হত্যা মামলায় জড়িয়ে যেতে হবে।

এরপর ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। ভোরবেলায় জানতে পারি যে প্রথম আলোতে আমাদের পরামর্শমতই ৯ দফা এসেছে। অন্যদিকে দুইজন সমন্বয়ক আলাদা আপোষকামী ৮ দফা নিয়ে মন্ত্রীদের সাথে মোলাকাত করে।

ইশরাক ফেসবুকে লেখেন, এই ৯ দফা মুসাবিদা করেন ঢাবি শিবির সভাপতি ও সমন্বয়ক সাদিক কাইয়েম। পাঠানো হয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের নামে। ছাপানোর ব্যবস্থাও শিবির নিজের মেকানিজমে করে। বিন্দুমাত্র ক্রেডিট কিংবা পদের লোভ ছাড়া ঢাবি শিবির নিভৃতে কাজ করে গেছে।

আজকেও প্রথম আলোর সাংবাদিক সাদিক কাইয়েমকে জিজ্ঞেস করেছে যে তার নাম্বার থেকেই তো ৯ দফার মেসেজ এসেছে, এটা নিয়ে সে লিখছে না কেন। সাদিক জানিয়েছে যে এই মুহুর্তে এসব বলে বিপ্লবকে অস্থিতিশীল করা তাদের উদ্দেশ্য না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে ব্যাচে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা সাদিক কাইয়েম সম্ভবত ঢাবি শিবিরের সাবেক রকস্টার সভাপতি মির্জা গালিবকেও ছাড়িয়ে গেছেন জুলাই বিপ্লবে তার অবদানের মাধ্যমে।

রোববার একটি স্ট্যাটাসে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান লিখেছেন, ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে, পরিচয় জুলাইয়ের ২৫ তারিখ থেকে, তারপর নিয়মিতই কথা হতো। হঠাৎ সালমানের শিবির পরিচয়ে অবাকও হয়েছেন জুলকারনাইন। তিনি লেখেন, সালমানের প্রকৃত নাম শাদিক কাঁইয়ূম এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি।

সাদিককে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম। তিনি লেখেন, সাদিকের শিবিরের সভাপতি ঘোষনা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, আপত্তি যে সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সাধারন ছাত্রদের সাথে-জনতার ঈমানের প্রতি বেঈমানি করেছে।

সমন্বয়করা অরাজনৈতিক জেনেই তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে সবাই। শিবিরের কারো ডাকে সাড়া দেয়নি। ছাত্রদের মধ্যে বাদবাকী কেউ শিবির থেকে থাকে তারাও ঘোষনা দিয়ে বের হয়ে যাক। অন্য দলের থাকলেও বের হয়ে যাক। এ ধরনের কাজ মোনাফেকি কাজ কারবার। সাদিক নিজে মোনাফেক, তার পরিচয় গোপন রেখে জামায়াত ও দল হিসেবে জাতির সাথে মোনাফেকি করেছে বলে আমি মনে করি।

সাদিককে নিয়ে সাংবাদিক আবির হাকিম ফেসবুকে লেখেন, কোভিডের পরে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের এক বড় ভাই একদিন সাদিকরে পরিচয় করাইয়া দিছিলো। বলছিলো, সাদিক আমাদের এলাকার ছোটো ভাই। ছাত্রলীগের ফ্রেশ ইমেজের ছেলে। সামনে ওরে হলের নেতা বানাইতে হবে। আমি যেন দেখে রাখি। সবকিছুই মানা যায় ভাই। কিন্তু ওরা যে শিবির হয়ে ফিরে আসতে পারে তা ভাবতে পারি নাই।

১৯৯০ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদে জাতীয় ছাত্রসমাজ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বৈরাচারের সহযোগী হওয়ায় জাতীয় ছাত্রসমাজ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সব ছাত্রসংগঠনের মধ্যে তখন ঐকমত্য হয়েছিল। সিদ্ধান্তটি ছিল, এই দুই সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না৷

খায়রুল কবির আরও বলেন, শিবির ও ছাত্রসমাজের বিষয়ে এখনকার ছাত্রসংগঠনগুলো কী আচরণ করবে, সে ব্যাপারে আমরা এখনকার ছাত্রসমাজের ওপরই আস্থা রাখতে চাই। আমরা দলীয় বা সাংগঠনিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলছি না৷ সমালোচকরা বলছেন, শিবিরের এমন কর্মকাণ্ড মুনাফিকী আচরণ। ফাসীবাদের অংশী হবার কারণে তারাও হত্যার দায় এড়াতে পারে না।

মুনাফিকী আচরণ

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ছিল সর্বত্র। আওয়ামী লীগ শুরু থেকে দাবি করে আসছিল, এ আন্দোলনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত-শিবির। যদিও ছাত্রসংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এ দাবির বিরোধিতা বা সমর্থন করে কিছু বলা হয়নি।

সেসময় আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে বলে জানান আওয়ামী নেতারা। মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে তাঁরা সংঘাতে জড়িত নন। কাজেই শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ লাশ চায়। এ জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নিয়ে আসছে।

তখন চব্বিশের সতের জুলাই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি জড়িত নয়। তবে এই আন্দোলনে তাঁদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। সেই সমর্থন তাঁরা দিয়ে যাবেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসংগত বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা খুব দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলতে চাই, এই আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সরাসরি জড়িত। আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে কখনোই সরাসরি জড়িত নই। আমরা তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। সেই সমর্থন আমরা দিয়েই যাব।

চব্বিশের পনের সেপ্টেম্বর। বিএনপি মহাসচিব বললেন ভিন্নকথা। বললেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় তাঁর দলের ৪২২ জন নিহত হয়েছেন। নিহত প্রত্যেকের নাম, পরিচয় ও ঠিকানা তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। এই তালিকা বিএনপির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় সারা দেশে ৮৭৫ জন শহীদ হন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ হওয়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষের মধ্যে একটা বড় অংশ যে বিএনপির নেতা-কর্মী, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং তা তাঁদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল। আজও তাই প্রিয় রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ খুব প্রাসঙ্গিক।

বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
জাতির তরুন রক্তে পুষেছে নির্বীর্যের সাপ।

 

 

 

 

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top