রসিকের কোটি টাকা আত্নসাত: ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:০৪
রংপুর থেকে:
রংপুর সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক শাখায় কোটি টাকা লুট হবার অভিযোগ উঠেছে। করাপোরেশনের রোড রোলার, এসকেভেটর, হুইল ড্রেজার ছোট ডাম্পার, বড় ডাম্পার সহ সর্বাধুনিক যান্ত্রিক সামগ্রী ভাড়া দেয়ার নামে প্রায় কোটি লোপাট হয়ে গেছে। ভাড়া দেয়া হয়েছে অথচ সেই অর্থ করপোরেশনের তহবিলে জমা হয়নি।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি দুই কর্মকর্তা কর্মচারীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করেছে। সেই সাথে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫শ টাকা দায়ীদের কাছ থেকে আদায় করারও সুপারিশ করা হয়েছে। তবে একমাস অতিবাহিত হবার পরেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর দায়ী যান্ত্রিক শাখার অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম সুমন ও উপ সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম রাজিব সাসপেন্ড করে তাদের নামে করপোরেশনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করার সুপারিশ করে ফাইল মেয়রের কাছে গেলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা।
সিটি করপোরেশনের মেয়র দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হবার পর করপোরেশনের বিভিন্ন শাখায় দৈনিক মজুরী ও চুক্তি ভিত্তিক প্রায় দু শতাধিক কর্মচারীকে গোপনে নিয়োগ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি পত্রিকায় বা কোন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেননি। নিয়োগ দিয়ে তাদের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করেছেন। করপোরেশনের গুৃরুত্বপুর্ন বেশ কয়েকটি বিভাগের তাদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অথচ দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া কর্মচারীরা কোন ফাইলে নোট দেবার এখতিয়ার আইনত না থাকলেও তাদের দিয়ে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদের মধ্যে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া মেয়রের ভাগিনা বলে পরিচয়দানকারী রবিউল ইসলাম সুমনকে যান্ত্রিক শাখার অফিস সহকারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপরদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রেজাউল করিম রাজুকে একই শাখায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাবার পর সুমন নিজেকে মেয়রের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে যান্ত্রিক শাখায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সিটি করপোরেশনের জন্য সরবরাহ করা সর্বাধুনিক রোড রোলার এসকেভেলেটর, হুইল ড্রেজার, টেইলার , ছোট ডাম্পার , বড় ডাম্পার সহ অন্যান্য যান্ত্রিক সামগ্রী ভাড়া দেবার নামে গত ৭/৮ মাসে প্রায় কোটি টাকারও বেশী অর্থ করপোরেশনের তহবিলে জমা না দিয়ে পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে করপোরেশনের অত্যাধুনিক রোড রোলার যার প্রতিটির এক দিনের ভাড়া আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, তিনটি এসকেভেটর আছে যার প্রতিদিনের ভাড়া সাড়ে বার হাজার থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। একই ভাবে ব্যাক হো লোভারের প্রতিদিনের ভাড়া ৮ হাজার ৭শ টাকা, হুইল লোভারের ভাড়া ৮ হাজার ৭শ টাকা হুইল ড্রেজারের ভাড়া ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও টেইলার , ছোট ডাম্পার , বড় ডাম্পার যার ভাড়া নির্ধারন করেনি করপোরেশন। নিয়ম অনুযায়ী করপোরেশনের ওই সব যান্ত্রিক সামগ্রী ঠিক্দাারী প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিতে চাইলে নির্ধারিত ফি করপোরেশনের তহবিলে জমা প্রদান করে রশীদ নিয়ে তার পরেই ব্যাবহার করতে পারবে। কিন্তু সুমন মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে করপোরেশনের সর্বাধুনিক ইকুইপম্যান্ট ও ট্রাক ইচ্ছে মতো ভাড়া দিয়ে সেই টাকা পকেটস্থ করেছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর যান্ত্রিক শাখার সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান ৩৫ পৃষ্টার একটি প্রতিবেদন মেয়র ও প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তার কাছে পাঠালে নড়ে চড়ে বসেন তারা। ঘটনা তদন্তে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেনকে প্রধান নির্বাহি প্রকৌশলী আলী আযম ও প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন মেয়র।
তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৬ দফা সুপারিশ নামা তৈরী করে মেয়রের কাছে পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয় কার্যাদেশ ব্যাতিত ইকুইপম্যান্ট রোলার /যানবাহন ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট চালকরাও শাস্তি যোগ্য অপরাধ করেছে। অপরদিকে যান্ত্রিক শাখার অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম সুমন, ও উপসহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম রাজিব যান বাহন রোলার সহ ইকুইপম্যান্ট ভাড়া নিয়ন্ত্রণ কারী হিসেবে ভাড়া আদায় ছাড়াই ওই সব যান বাহন সহ ইকুইপম্যান্ট ব্যাবহারে চালকদের সহযোগীতা করার জন্য তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
সেই সাথে যান বাহন/ রোলার / ইকুইপম্যান্টপ ভাড়ার অনাদায়ি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫শ টাকা এবং টেইলার, ছোট ডাম্পার ও বড় ডাম্পার এর অনির্ধারিত ভাড়া নির্ধারণ করে দায়ীদের কাছ আদায় করার সুপারিশ করেছেন। সব মিলিয়ে কোটি টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা না দিয়ে লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উপসহকারী প্রকৌশলী রাজিব তার লিখিত বক্তব্যে তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন অফিস সহকারী সুমন মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে যান্ত্রিক শাখার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতো। মেয়রের নাম ব্যবহার করে ডাম্পার ট্রাক গুলো সকলের অগোচরে ভাড়া দিতেন।
এদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের সিটি করপোরেশনের বাজেট পেশ করার সময় দেখানো হয় ২০১৯ অর্থ বছরে যান্ত্রিক সামগ্রী ভাড়া দিয়ে আয় হয়েছে ৩৬ লাখ টাকারও বেশী ২০২০ অর্থ বছরে আয় হয়েছে মাত্র ১১ লাখ টাকা যা মেসয়র নিজেই বাজেট পেশ করতে গিয়ে বলেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি কমিটির প্রধান তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি এর বাইরে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
অপরদিকে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স এ ব্যাপারে কোন আপোষ বা শিথিলতা নয় বলে জানান।
এনএফ৭১/আরআর/২০২০
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।