মহাসপ্তমী আজ, শক্তি নিয়ে ফিরছে দুর্গা
দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৩৬
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ঢাক-কাঁসরের বাদ্যে অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই দুর্গাপূজা। শনিবার (২১ অক্টোবর) মহা সপ্তমী। গতকাল ছিল মহাষষ্ঠী, এদিন দেবী দুর্গা শক্তি নিয়ে ভক্তদের কাছে পৌঁছান। সকাল সাড়ে ৮টায় বোধনের পর খুলে দেওয়া হয় মণ্ডপ। এর মাধ্যমে দেবী জেগে ওঠেন। আর তাতে দর্শন করা যায় দেবীর। পুরোহিতরা জানান, এর মধ্যে দিয়েই দুর্গাপূজা শুরু হয়।
সর্বজনীন পূজা আয়োজকরা জানান, শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এ সময় পূজারীরা প্রতিমার সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করবেন।
যদিও দুর্গাপূজা শুরু হলো শুক্রবার থেকে, তবে দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন–বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা।
শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন—দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে, আর দশমীর দিন মর্ত্যলোক ছেড়ে যাবেন এই একই বাহনে।
মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আগামী রবিবার (২২ অক্টোবর) অষ্টমী, সোমবার ( ২৩ অক্টোবর ) মহানবমী এবং মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমীর মাধ্যমে বিদায় নেবেন দুর্গা দেবী।
চলতি বছর মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে রবিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পূজা শুরু সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানান, দুর্গোৎসবের অষ্টমীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সপ্তমী পূজার দিন অসহায় মানুষের মধ্যে কমিটির পক্ষ থেকে বস্ত্র বিতরণ করা হবে। এছাড়া রক্তদান কর্মসূচি রয়েছে। মহাষ্টমীতে জেলখানায় খাবার পাঠানো হবে।
বিজয়া দশমীর দিন মঙ্গলবার বিকাল তিনটার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হবে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে পলাশীর মোড় থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে, গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১৬৮। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪৫, গত বছর ছিল ২৪২। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পুজোর সংখ্যা বেড়েছে।
শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন পূজা করতে ঢাকার ২৪৬টি পূজামণ্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখতে ২৫টি নির্দেশনা দিয়েছে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আছে- প্রতিমা তৈরি থেকে পূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মন্দির ও মণ্ডপে নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মণ্ডপে নারী ও পুরুষের পৃথক যাতায়াত ব্যবস্থা রাখা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিজস্ব নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক রাখা, সন্দেহভাজন দর্শনার্থীদের ও নারী স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নারী দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা।
এছাড়া মাইক, পিএ-সেট, আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং ভক্তিমূলক ছাড়া অন্য কোনও গান না বাজানো, কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে- এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা, মন্দির ও মণ্ডপে আর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা সংযোগের ব্যবস্থা করা, যানবাহন ও দর্শনার্থী চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে- এমন স্থানে পূজাকালীন কোনও দোকানপাট বরাদ্দ না দেওয়া।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।