‘হ্যান্ড অফ গড’ থেকে ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ — জন্মদিনে স্মরণ কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে
স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১৮
ফুটবল ইতিহাসে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়—একই ম্যাচে হাত দিয়ে গোল করা আর মাঝমাঠ থেকে একা দৌড়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে দেওয়া। এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা, ৬৫ বছর আগে আজকের এই দিনে জন্ম নেওয়া ফুটবলের এক জাদুকর। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা তার সেই দুই গোলই তাকে পৌঁছে দিয়েছিল অমরত্বের উচ্চতায়।
মেক্সিকোর অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের শুরুটা ছিল নাটকীয়। তীব্র গরমে গাঢ় নীল অ্যাওয়ে জার্সি পরে খেলা কঠিন হবে বুঝতে পেরে কোচ কার্লোস বিলার্দো খুঁজছিলেন হালকা রঙের জার্সি। তখনই ম্যারাডোনা এক জার্সি হাতে নিয়ে বলেন, “বাহ, জার্সিটা সুন্দর, আমরা এটা পরেই ইংল্যান্ডকে হারাব।” ভবিষ্যদ্বাণীর মতোই সেটিই পরে ইতিহাস লিখেছিল আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধে গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধেই ম্যারাডোনা তৈরি করলেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত—‘হ্যান্ড অফ গড’। প্রতিপক্ষের ভুলে পাওয়া বল তিনি মাথা দিয়ে হেড করার ভান করে বাঁহাতে ঠেলে দেন জালে। রেফারি গোলটি বৈধ ঘোষণা করেন, আর সেই মুহূর্তেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। পরে ম্যারাডোনা রসিকতা করে বলেছিলেন, “গোলটা কিছুটা আমার মাথায়, আর কিছুটা ঈশ্বরের হাতে হয়েছিল।”
তবে চার মিনিট পর যা ঘটেছিল, তা ছিল শিল্পের এক অনন্য প্রকাশ। নিজের অর্ধ থেকে বল পেয়ে ম্যারাডোনা একে একে গ্যারি স্টিভেন্স, পিটার রেইড, টেরি বুচার, টেরি ফেনউইক—সবাইকে বোকা বানিয়ে এগিয়ে যান। শেষে গোলরক্ষক পিটার শিলটনকেও ফাঁকি দিয়ে বল পাঠান জালে। সেটিই ইতিহাসে স্থান পায় ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ নামে।
ইংলিশ ফরোয়ার্ড গ্যারি লিনেকার পরে বলেছিলেন, “সে এমনভাবে ডিফেন্ডারদের পাশ কাটাচ্ছিল যেন তাদের অস্তিত্বই নেই। সেদিন ওর গোল দেখে হাততালি দিতে ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু দিইনি—কারণ দেশে ফিরলে হয়তো বাঁচতাম না!”
মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে করা সেই দুই গোল বদলে দিয়েছিল শুধু ম্যাচ নয়, পুরো ফুটবল ইতিহাসকেই। একদিকে ‘হ্যান্ড অফ গড’—বিতর্ক ও প্রতারণার প্রতীক, অন্যদিকে ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’—ফুটবলের শিল্প ও সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক। আর এই দুইয়ের মাঝখানে চিরকালীন এক নাম—ডিয়েগো ম্যারাডোনা, যিনি খেলার সীমা ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন এক কিংবদন্তি, এক অনুভূতি।
নিফ্লা৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।