সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

নিহত বেড়ে ১৫০০, মৃতের সংখ্যা ছাড়াতে পারে ১০ হাজার

তুরস্ক-সিরিয়ার শক্তিশালী ভূমিকম্পে লাশের মিছিল

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৩:২৩

তুরস্ক-সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্প

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সিরিয়া সীমান্তের কাছে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে এ পর্যন্ত সিরিয়া ও তুরস্ক মিলিয়ে অন্তত ১৫০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সোমবার ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তুরস্কে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে গাজিয়ানটেপ শহরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। অবশ্য তুকি কর্তৃপক্ষ বলেছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪। ভূমিকম্পে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলও কেঁপে ওঠে।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের ফলে ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে অনেক মানুষ আটকা পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপে হন্যে হয়ে স্বজনদের খুঁজছেন মানুষ। কেউবা আহতদের উদ্ধারের পর ছুটছেন হাসপাতালের পথে। হাসপাতাল ও ধসে পড়া ভবনগুলোর সামনে স্বজনদের কান্না আর আহাজারি যেন থামছেই না।

এদিকে তুরস্কের কোথাও কোথাও তুষারপাত আর বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। একজন উদ্ধারকারী বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় ইস্তাম্বুলের ফ্লাইট সাময়িক সময়ের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা ভূমকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহজে পৌঁছাতে পারছি না।

ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস)। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা এক হাজার থেকে ১০ হাজার জনে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া ১০ হাজার থেকে এক লাখে পৌঁছানোর আশঙ্কা ২০ শতাংশ। সংস্থাটির এমন অনুমান দুর্যোগকবলিত অঞ্চল, সেখানকার জনসংখ্যা, অবকাঠামোগত দুর্বলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর করা হয়। সংস্থাটির ধারণা, এই ভূমিকম্পে তুরস্কে এক থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে। খবর সিএনএনের।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ভূম্পিকম্পে ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। প্রতিবেশি দেশ সিরিয়া, লেবানন এবং সাইপ্রাসেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।’

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওতকে জানান, কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে উদ্ধারদল ও সরবরাহ উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তুরস্কে '৪ মাত্রার' সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি শহরের স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, আশা করছি, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুতই এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্কের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি, সেইসঙ্গে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ তুরস্কের সঙ্গে আছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে প্রস্তুত ইউক্রেনের জনগণ।

অপরদিকে ইসরাইল সরকারও তুরস্ককে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিগত ৮০ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি তুরস্ক। সর্বশেষ ১৯৩৯ সালে তুরস্কে এ ধরনের ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে বছর ভূমিকম্পে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে ইউএসজিএস।

সংস্থাটি আরও জানায়, এ ধরনের ভূমিকম্প খুবই বিরল। গত ২৫ বছরে মাত্র ৭বার তুরস্কে ৭ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। তবে আজকের ভূমিকম্পটি সবচেয়ে শক্তিশালী। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পশ্চিম তুরস্কের এলাজিগ প্রদেশে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪১ জন নিহত হন। আহত হন ১৬শ'র বেশি মানুষ। 

 

 

 

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top