বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির উদ্বোধন করলেন মোদি
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০২৪, ১৮:৫৩
নানা বিতর্ক উপেক্ষা করে ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় মহা ধুমধাম করে রাম মন্দির উদ্বোধন করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ সোমবার দুপুরের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মন্দিরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় মহাসমারোহে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট) উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা) এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
শ্রী রামজন্মভূমি ট্রাস্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রায় আট হাজার অতিথির উপস্থিতিতে, আলো ঝলমলে সুসজ্জিত অযোধ্যায় এই মহোৎসব পালিত হয়। এ সময় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকা।
বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ এবং কমান্ডোবাহিনী তো আছেই, এ ছাড়া প্রতিটি উঁচু বাড়ির মাথায় বিশেষ রাইফেল নিয়ে পাহাড়া দেন স্নাইপারা। আকাশে উড়ে অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন। বসানো হয় ১০ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায়ও প্রস্তুত রাখা হয় প্রশিক্ষিত বাহিনী।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের সময় পুষ্পবৃষ্টি করা হয় আকাশ থেকে। হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়িয়ে দেওয়া হয় অযোধ্যার ওপর। অনুষ্ঠানের শুরুর পর নরেন্দ্র মোদি হাতে পুজার ডালা নিয়ে ধীরে ধীরে মন্দিরের ভেতর এগিয়ে যান।
রামমন্দিরের ভেতরের রামলালার বিগ্রহের চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এই সময়েই দেশের বিভিন্ন মঠ-মন্দির থেকে আমন্ত্রিত ১২১ আচার্য ও পূজারির মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় রামলালার প্রাণ।সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ এবং মোহন ভাগবত। হাতে পদ্মফুল নিয়ে পুজা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে রামলালার মূর্তি নিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর শুরু হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠার আচার। ঠিক বেলা ১২টা বেজে ২৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডে ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’ শুরু হয়।
এ সময় সোনার মুদ্রা দিয়ে মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন মোদি। ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ ৮৪ সেকেন্ডে হলেও অযোধ্যার রামমন্দিরে সমগ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি চলে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন পাটেলসহ আরও অনেকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রায় আট হাজার অতিথির উপস্থিতিতে আলো ঝলমলে সুসজ্জিত অযোধ্যায় এই মহোৎসব পালিত হয়। এ সময় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকা।
বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ এবং কমান্ডো বাহিনী তো আছেই, এ ছাড়া প্রতিটি উঁচু বাড়ির মাথায় বিশেষ রাইফেল নিয়ে পাহারা দেন স্নাইপাররা। আকাশে ওড়ে অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন। বসানো হয় ১০ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায়ও প্রস্তুত রাখা হয় প্রশিক্ষিত বাহিনী।
অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঘটে তারকা-সমাবেশ। রাজনীতিবিদরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন শিল্পপতি, বলিউড সুপারস্টার ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের নক্ষত্ররা।
অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই অযোধ্যায় পৌঁছে যান অমিতাভ ও অভিষেক বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত, কঙ্গনা রানাওয়াত, ভিকি কৌশল, ক্যাটরিনা কাইফ, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, অংশুমান খুরানা, রোহিত শেঠি, রাজকুমার হিরানি, মহাবীর জৈনরা। তেলেগু তারকা রজনীকান্ত, চিরঞ্জীবি ও রাম চরণ ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা মনোজ জোশিও।
রাম মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে ড্রোন, স্নাইপার এবং বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে রাম মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে বয়কট করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরেধী দলগুলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। এ ছাড়া শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও জানিয়ে দিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে তারা যাবেন না।
এদিকে মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, ছত্তিশগড়, হরিয়ানাসহ ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, সমস্ত স্কুল ছুটি থাকবে। এমনকি রাজ্যের সমস্ত মদের দোকানও বন্ধ থাকবে।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রায় ১৮ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে মন্দিরটি নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ সম্পূর্ণ হলে মন্দির কমপ্লেক্সটি হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিন্দু মন্দির।
অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন, অযোধ্যা হলো রামের জন্মস্থান এবং বাবরি মসজিদ এ দেবতার ঠিক জন্মস্থানে একটি রাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর মুসলিম আক্রমণকারীরা তৈরি করেছিল। একই স্থানে একটি মন্দির নির্মাণের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিজেপি ১৯৯০-এর দশকে রাজনৈতিকভাবে ভারতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভূমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলেছে। অবশেষে ২০১৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত ওই জমির মালিকানা হিন্দুদের দেন। আর মুসলিমদেরকে শহরের বাইরে একটি জমি দেওয়া হয় মসজিদ নির্মাণের জন্য।
২১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত নতুন তিনতলা মন্দিরটি গোলাপি বেলেপাথর এবং কালো গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি। এটি ৭০ একর কমপ্লেক্সের ৭.২ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।