বৃহঃস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

হামাসপ্রধান হানিয়ার দাফন দোহায়, জানাজা পড়াবেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:৫৬

ছবি: সংগৃহীত

প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার জানাজা পড়াবেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি। আজ বৃহস্পতিবার ইরানের রাজধানী তেহরানে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন হানিয়া। বুধবার সকালে তাঁর নিহত হওয়ার খবর প্রচার করে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। খবরে বলা হয়, তেহরানে চালানো হামলায় হানিয়া ও তাঁর এক দেহরক্ষী নিহত হন।

তেহরানে হানিয়ার ওপর হামলার পেছনে কে জড়িত, সেটা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে হামাসের দাবি, ইসরায়েলের হামলায় হানিয়া নিহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে তেল আবিবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিদেশে শত্রুদের হত্যা করার জন্য কুখ্যাতি রয়েছে ইসরায়েলের। এর আগেও তারা অনেকবার এ ধরনের কাজ করেছে।

এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

এর আগে তেহরানে জানাজার নামাজ পড়াবেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।গতকাল তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে 'কঠোর শাস্তি' দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া খামেনি আরও বলেন, 'ইরানের ভূখণ্ডে হানিয়ার রক্ত ঝরেছে, প্রতিশোধ নেওয়া এখন আমাদের কর্তব্যে পরিণত হয়েছে।'

হানিয়ার মৃত্যুতে বুধবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে তেহরান। বুধবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে। স্থানীয় সময় রাত ২টায় ইরানের রাজধানীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের জন্য নির্মিত এক বাড়িতে বিমান হামলায় হানিয়া নিহত হন।

হামাস ও ইরান ইসরায়েলকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে। তবে এখনো এই হামলার দায় স্বীকার করেনি ইসরায়েল। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে শীর্ষ হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শোকরকে হত্যা করে ইসরায়েল। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল।

মঙ্গলবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যোগ দিতে তেহরানে অবস্থান করছিলেন হানিয়া। ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান গতকাল বলেন, 'জিয়নবাদীরা (ইসরায়েল) শিগগির তাদের এই কাপুরুষোচিত ও জঙ্গি কার্যক্রমের পরিণাম ভোগ করবে।'

হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য মুসা আবু মারজুক প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে বলেন, 'আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার ঘটনা একটি কাপুরুষোচিত কাজ এবং এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।'

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে এই অঞ্চলে অস্থিরতা কমানো ও গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুর আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, হামাসের মধ্যপন্থি নেতা হানিয়ার মৃত্যুতে যুদ্ধবিরতি চালুর উদ্যোগ বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুল রাহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, 'মধ্যস্থতা কীভাবে সফল হবে যখন এক পক্ষ অপর পক্ষের প্রতিনিধিকে হত্যা করে?'

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় এক হাজার ১৯৭ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন মানুষ, যাদের ১১১ জন এখনো গাজায় আটক আছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জিম্মিদের মধ্যে ৩৯ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার ও প্রতিশোধমূলক গণহত্যা শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ হাজার ৪৪৫ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top