দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হতে যাওয়া কে এই অতিশী?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৩

ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন অতিশী মারলেনা। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আম আদমি পার্টির (এএপি) বিধায়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালই নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অতিশীর নাম প্রস্তাব করেছেন। বিকেলে দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনার সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র দেবেন কেজরিওয়াল। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

সূত্রের খবর, বিধায়কদের বৈঠকে কেজরিওয়ালকেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন দলের নেতা দিলীপ পান্ডে। কেজরিওয়াল অতিশীর নাম প্রস্তাব করলে সবাই এটি গ্রহণ করেন। বর্তমানে দিল্লি সরকারের শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সামলাচ্ছেন অতিশী।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র ৪৩ বছরের আতিশি মন্ত্রী হন আবগারি (মদ) মামলায় উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর। তারপর রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং ও কেজরিওয়ালকেও গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আতিশি ও অন্য মন্ত্রীরা সরকারি কাজ চালিয়ে গেছেন।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সময় নভেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে দিল্লি বিধানসভার ভোট করানোরও দাবি জানাবেন কেজরিওয়াল। তা মানা হোক না হোক, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আতিশী কাজ করতে পারবেন আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে তখনই।

দিল্লির আবগারি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি কেজরিওয়াল। তিনিই দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি গ্রেফতার হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। রবিবার দুপুরে দলীয় এক সম্মেলনে জানান, দু’দিন পরেই মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেবেন তিনি। পুনরায় ভোটে না জেতা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদে তিনি আর ফিরবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

তার পর থেকেই দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী পদে কেজরিওয়ালের উত্তরাধিকারী হিসাবে পাঁচ জন আপ বিধায়কের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এই পাঁচ বিধায়ক হলেন অতিশী মারলেনা, সৌরভ ভরদ্বাজ, কৈলাস গহলৌত, গোপাল রাই এবং ইমরান হুসেন। এই পাঁচ বিধায়ক ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা।

দিল্লি বিধানসভার মোট আসন ৭০। গত দুই ভোটেই আপ দুই–তৃতীয়াংশ আসন জিতেছিল; যদিও লোকসভার ৭ আসনই দখল করেছিল বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন–সমঝোতা করেছিল এএপি। কিন্তু লাভ হয়নি। এবার বিধানসভা ভোটে কী হবে, সেই জল্পনা শুরু হয়েছে।

দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কেজরিওয়ালকে শুক্রবার জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে জামিন দেওয়ার সময় শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, জেল থেকে বেরোনোর পর কেজরিওয়াল কোনও ফাইলে সই করতে পারবেন না। নিজের দফতরেও যেতে পারবেন না। এছাড়া প্রকাশ্যে এই সংক্রান্ত কোনও মন্তব্যও করতে পারবেন না।

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অতিশীই দেশের দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ইস্তফার কথা ঘোষণা করার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন এই নেত্রী।

তাঁকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কিচেন ক্যাবিনেটের বিশ্বস্ত সৈনিক মনে করা হয়। আর তাই মঙ্গলবার দায়িত্ব নিয়েই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিজের গুরু বলে উল্লেখ করলেন তিনি। এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিল্লির নয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সরকার ফেলার চক্রান্তে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করা হয়েছে।

দিল্লিতে কেবলমাত্র একটিই মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁর নাম অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাঁকে ফের একবার দিল্লির কুর্সিতে বসানোর জন্যই আমি আগামী কয়েকমাস লড়াই করব।' দিল্লি ক্যাবিনেটের একমাত্র মহিলা মন্ত্রী অতিশির কাঁধে এ বার গুরুদায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তিনি নিজের গুরুর পরামর্শ এবং তত্ত্বাবধানে করবেন বলে জানিয়েছেন আতিশি।

তিনি এ দিন আরও বলেন, 'আমি যদি অন্য কোনও পার্টিতে থাকতাম আমায় হয়তো নির্বাচনে টিকিটও দেওয়া হত না। কিন্তু, কেজরিওয়াল আমার উপর ভরসা করেছেন।'

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী আতিশি কালকাজি এলাকার বিধায়ক। দিল্লিতে আবগারি দুর্নীতি মামলায় মণীশ সিসোদিয়ার গ্রেপ্তারের পর তিনি মন্ত্রিত্ব পান। কেজরিওয়াল জেলবন্দি থাকাকালীন তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনের জন্য কেজরিওয়াল আতিশির উপরই দায়িত্ব দেন। আপ নেতৃত্ব আতিশির উপর ভরসা করে তা বলাই বাহুল্য।

২০১৯ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম ভোটে লড়েছিলেন আতিশি। কিন্তু সে বার বিজেপি প্রার্থী গৌতম গম্ভীরের কাছে ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর ২০২০ সালে তিনি কালাকাজি বিধানসভা থেকে ভোটে দাঁড়ান। ২০২৩ সালে প্রথমবার কেজরিওয়াল ক্যাবিনেটের সদস্য বেছে নেওয়া হয় আতিশিকে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top