খামেনির মৃত্যু হলে ইরানের নেতৃত্ব দেবেন কে?
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৩০
ইরান যখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পরিকল্পনা করছে, তখন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি 'গুরুতর অসুস্থ' বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৫ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনি মারা গেলে তার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র মোজতাবা তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি উল্লেখ করেছে, খামেনির বর্তমান শারীরিক অবস্থায় পরবর্তীতে তার উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খামেনির মৃত্যুর পর নতুন উত্তরসূরি কে হবেন, সে বিষয়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) মতামত দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাশালী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ ইরানে রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছে ৮১ বছর বয়সী খামেনি। ফলে এ নেতার উত্তরসূরি কে হতে যাচ্ছেন, সেটা ইরানের জন্য বিশাল গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর গুরুত্ব রয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পদে আসীন দ্বিতীয় ব্যক্তি। এই পদে কে থাকবেন তা নির্ধারণ করেন বিশেষজ্ঞমণ্ডলী বা অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টস নামে ৮৮ জন ধর্মীয় নেতার একটি পরিষদ।
যেভাবে নেতা নির্বাচন করা হয়-
খোমেনির যদি মৃত্যু হয় বা তিনি কার্যক্রম পরিচালনায় অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে তিন সদস্যের একটি পরিষদ তার কাজ করবে, যেখানে আছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, বিচার বিভাগের প্রধান ও গার্ডিয়ান কাউন্সিলের একজন ধর্মতাত্ত্বিক। ৮৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের ইসলামি ধর্মীয় নেতার পরিষদ যত দিন তাদের উত্তরসূরি নির্বাচন না করছেন, তত দিন এই পরিষদ দায়িত্ব পালন করে যাবে।
এই বিশেষজ্ঞ পরিষদ আট বছরের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। তবে তার আগে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন পেতে হয় তাদের। আর এই গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্যদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচন করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।
এই দুটি পরিষদ বা মণ্ডলীর ওপর সর্বোচ্চ নেতার প্রভাব থাকে। গত তিন দশক ধরে আলি খামেনি নিশ্চিত করেছেন যে বিশেষজ্ঞ মণ্ডলীর নির্বাচিত সদস্যরা যেন রক্ষণশীল হয় - যারা তার উত্তরসূরি নির্বাচনের সময় তারই নির্দেশ মেনে চলবে। নির্বাচিত হবার পর, সর্বোচ্চ নেতা তার পদে আজীবন বহাল থাকতে পারেন।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, সর্বোচ্চ নেতা হতে হবে একজন আয়াতুল্লাহকে, অর্থাৎ যিনি একজন শীর্ষস্থানীয় শিয়া ধর্মীয় নেতা। কিন্তু আলি খামেনিকে যখন নির্বাচন করা হয়েছিল, তিনি আয়াতুল্লা ছিলেন না। তখন তিনি যাতে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন, তার জন্য আইন পরিবর্তন করা হয়েছিল।
ফলে প্রয়োজনে আইন আবার পরিবর্তন করা সম্ভব। যখন নতুন নেতা নির্বাচনের সময় আসবে, তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে আইন পরিবর্তনের রাস্তা খোলা রয়েছে।
খামেনির পর কাকে বেছে নেবে ইরান?
ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির রাজনৈতিক উপদলগুলো পরবর্তী উত্তরসূরি কেমন হবেন তা নিয়ে গভীরভাবে আগ্রহী, কিন্তু ইরানে এমন কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তি নেই যিনি একটা সঙ্কট প্রতিরোধ করার জন্য নেতৃত্ব দিতে পারেন।
আলি খামেনির অনুগত মহলে তার একটা বড় প্রভাব রয়েছে। এদের বেশিরভাগই ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্য। রেভল্যুশনারি গার্ড যদি কোনো প্রার্থীকে পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দেখতে না চায়, বা তারা যদি কোনো প্রার্থীকে অপছন্দ করে, তাহলে তাকে ঠেকানোর চেষ্টা যে তারা করবে সে সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন গুজব আছে যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে যা চূড়ান্তভাবে গোপনীয়। ঐ তালিকায় কাদের নাম আছে তা জানার দাবিও কেউ করেন না।
তবে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বা বিভিন্ন ঘটনার নিরিখে বলা হচ্ছে যে আলি খামেনির পছন্দের উত্তরসূরি হতে পারেন তার ছেলে মোজতাবা অথবা বিচার বিভাগের প্রধান ইব্রাহিম রাইসি। সেটা যদি সঠিক হয়, তাহলে তার কিছুটা ওজন অবশ্যই রয়েছে। এদিকে রাইসির পূর্বসূরি, সাদেক লারিজানি ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দুজনেই পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহী বলে ধারণা করা হয়। সূত্র: ইত্তেফাক, যুগান্তর
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।