"অতিথি" পরিচয়ে পাকিস্তান-বিরোধী জঙ্গিদের সুরক্ষা দেওয়ার ইঙ্গিত তালিবানের
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০৭
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রদেশে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী অবস্থানে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা করার কিছুদিন পরই তালিবানের তথ্যমন্ত্রী খায়রুল্লাহ খাইরখোয়া এ ধরনের বিরল মন্তব্য করলেন। তালিবান দাবি করেছে , মঙ্গলবারের হামলায় পাকতিকায় প্রায় ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। শরণার্থীদের বেশিরভাগই পাকিস্তান থেকে আসা ।
অন্য সুত্র থেকে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা না গেলেও জাতিসংঘ বলেছে, পাকিস্তানের বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ কয়েক ডজন বেসামরিক লোক নিহত হবার ব্যাপারে তারা প্রত্যন্ত আফগান প্রদেশ থেকে “বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পেয়েছে” ।
ইসলামাবাদ প্রকাশ্যে যদিও এই আন্তঃসীমান্ত হামলার কথা স্বীকার করতে বিরত থেকেছে, তবে পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা সংবাদদতদের বলেন, সামরিক অভিযানটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলায় জড়িত একটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর বিরুদ্ধে ছিল। তারা তাদের বেশ কয়েকটি "সন্ত্রাসী আস্তানা" ধ্বংস করেছে। এতে নিহত এক ডজনেরও বেশি জঙ্গির মধ্যে টিটিপির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারও রয়েছেন বলে জানানো হয়।
পাকিস্তানি হামলার নিন্দা জানিয়ে ক্ষুব্ধ খাইরখাওয়া বলেন, “এই অতিথি, বন্ধুদের রক্ষায় আফগান জাতির ঐতিহ্যকে অবশ্যই আমাদের সম্মান জানাতে হবে।’’ শুক্রবার তালিবান নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশিন এবং সামাজিক মাধ্যম এক্স’এ প্রচারিত এই ভাষণটিতে তিনি বাহ্যত টিটিপি’র কথাই বলেছেন।
এই তালিবান মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ১৯ শতক থেকে আফগানিস্তানে যথাক্রমে ব্রিটেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের “সামরিক হস্তক্ষেপের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে পাকিস্তানকে”। খায়েরখোয়া বলেন, “আফগানিস্তানে হামলা চালাবে বা যাদের এই ইচ্ছা আছে , অতীতের তিনটি পরাশক্তির পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত তাদের”।
টিটিপি কর্মীদের আফগানিস্তানে উপস্থিতি সম্পর্কে কোনও জ্যেষ্ঠ তালিবান নেতার এটিই প্রথম প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি। এর আগে, তালিবান কর্মকর্তারা জোরালোভাবে তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন যে, কোনও বিদেশী জঙ্গিকে আফগানিস্তানের মাটিতে অন্য দেশের প্রতি হুমকি হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় না ।
জাতিসংঘ টিটিপি’কে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তালিবান কাবুলের ক্ষমতা আবার গ্রহণের পর পাকিস্তানে তাদের আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে শত শত পাকিস্তানি অসামরিক ও সামরিক লোকজন নিহত হয়েছে।
শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আফগানিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে তার সরকারের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন। তবে টিটিপির নেতৃত্বাধীন আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের হুমকি সেই অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং টিটিপির সাথে সংঘর্ষের ফলে এই বছর ৯০০ জনেরও বেশি "সন্ত্রাসী" নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২৭ জন আফগান আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এবং যোদ্ধাও রয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, সহিংসতায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৪০০ সদস্য ও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। সূত্র: ভয়েস অফ আমেরিকা
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।