পাকিস্তানে ট্রেনে হামলা, ৪৫০ যাত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি, ১১ সেনা নিহত
বার্তাকক্ষ | প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৫, ১৭:৫০

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে জিম্মি হওয়া ট্রেনের যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১১ সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মির জঙ্গিরা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালের দিকে জঙ্গিরা ‘জাফর এক্সপ্রেস’ নামে ওই ট্রেনে গুলি ছোড়ে সেটিকে থামিয়ে ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ট্রেনটির যাত্রীদের উদ্ধার করতে যায় সেনাবাহিনী।
সেনাদের নিহত হওয়ার ব্যাপারে বেলুচ লিবারেশন আর্মি বলেছে, “১১ সেনা নিহত হয়েছে এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ১৮০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। আমাদের যোদ্ধারা জাফর এক্সপ্রেসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে চলন্ত একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রীকে জিম্মি করেছে জঙ্গিরা। মঙ্গলবার সকালের দিকে জঙ্গিদের ছোড়া গুলিতে ট্রেনের চালক ও কয়েকজন যাত্রী আহত হন। পরে ট্রেনে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেন সশস্ত্র হামলাকারীরা।
এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি দিয়েছে বালোচ লিবারেশন আর্মি। জঙ্গি গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ হুমকি দিয়েছেন, যদি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বা পুলিশ কোনো ধরনের অভিযান চালানোর চেষ্টা করে তাহলে ট্রেনের সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে। তিনি দাবি করেছেন, অভিযানে গিয়ে সেনাবাহিনীর ছয় সেনা নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “যে কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের জবাব সমান শক্তিতে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ছয় পাক সেনা নিহত হয়েছে এবং কয়েকশ যাত্রী আমাদের জিম্মায় রয়েছে। বালোচ লিবারেশন আর্মি এই অভিযানের পূর্ণ দায় নিচ্ছে।”
প্রদেশের রাজধানী কোয়েটার জ্যেষ্ঠ রেলওয়ে কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাশিফ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘বন্দুকধারীরা চলন্ত ট্রেনটির ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রীকে জিম্মি করেছে।’’
দেশটির রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, জাফর এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনের ৯টি বগিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার পেশওয়ারের উদ্দেশে যাওয়ার সময় সেটি হামলা চালিয়েছেন সশস্ত্র বন্দুকধারীরা।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করে আসা সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি ট্রেনে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এক বিবৃতিতে বিএলএ বলেছে, তারা ট্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী-সহ যাত্রীদের জিম্মি করেছে। যদিও প্রাদেশিক সরকার কিংবা রেলওয়ের সরকারি কর্মকর্তারা যাত্রী ও নিরাপত্তাকর্মীদের বিএলএর জিম্মি করার দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
বেলুচিস্তানের রেলওয়ে বিভাগের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বেলুচিস্তানের বোলান জেলার মুশকাফ এলাকায় ট্রেনটিতে হামলা হয়েছে। ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছেছেন।
বেলুচিস্তানের সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার করতে প্রদেশের সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ। সরকারি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে এলাকায় ট্রেনটি থামানো হয়েছে, সেটি পার্বত্যাঞ্চল। যে কারণে জঙ্গিদের আস্তানা স্থাপন ও হামলার পরিকল্পনা করা সহজ হয়েছে।
বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে সবেচেয়ে আলোচিত দ্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দ্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি সম্প্রতি প্রদেশজুড়ে বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এর আগে, গত নভেম্বরে বেলুচিস্তানের একটি রেলওয়ে স্টেশনে পাকিস্তানি সৈন্যদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালায় এই গোষ্ঠীর সদস্যরা। এতে বেসামরিক পোশাক পরিহিত ১৯ সৈন্যসহ অন্তত ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই সৈন্যরা ছুটি কাটাতে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনে চড়ার কয়েক মিনিট আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের খনিজসমৃদ্ধ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। স্বাধীন বেলুচিস্তানের দাবিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন তারা। এই প্রদেশে সোনা ও তামার খনি ছাড়াও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ গোয়াদর বন্দর রয়েছে। দেশটির এই বন্দরে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।