ফকিরহাটের কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া : ট্রে-পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রোপন

ফকিরহাট থেকে | প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারী ২০২২, ০৮:০০

ফকিরহাটের কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া : ট্রে-পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রোপন

বাগেরহাটের ফকিরহাটে খরা, বন্যা, জলোচ্ছাস, হিটস্ট্রেস ও কোল্ডইনজুরিসহ নানা বৈরি আবহাওয়াতে টেকসই পদ্ধতিতে কৃষি কাজে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে চাষিদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে কৃষি বিভাগ। বৈরি আবহাওয়া রুখতে পারেনি কৃষি ফসল উৎপাদনে কৃষকের অগ্রগতি। চলতি বোরো মৌশুমে ফকিরহাটের একঝাঁক প্রশিক্ষিত কৃষক ট্রে-পদ্ধতিতে ধান ও সবজির চারা উৎপাদ করে ব্যপক সফলতা পেয়েছে। কৃষিকাজে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় চাষাবাদে যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে এ উপজেলার লখপুর ও পিলজংগ ইউনিয়নে সমালয় ব্যবস্থাপনায় চলছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে ধানের চারা রোপনের কাজ।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয় চাষি শুকুর আলী বলেন, বৈরি আবহাওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে আমন ও বোরো মৌশুমে ধান বা সবজির চারা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই কৃষি বিভাগের পরার্মশে আমরা ট্রে-তে ধান বীজ বপন করে পরিচর্যা করি। এ পদ্ধতিতে বন্যা, খরা বা অতিরিক্ত শীতে ট্রে-র বীজ তলা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অপসারণ করা সহজ হয়। এমনকি প্রয়োজন মত পানি সেচ ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে পরিচর্যা করা সহজ হয়। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে একর প্রতি ধান বপন, রোপন ও কর্তনে খরচ বাঁচে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

পিলজংগ ইউপি চেয়ারম্যান মোড়ল জাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকের উচ্চ মূল্য হওয়া কৃষি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ বর্তমান সরকারের যুগান্তকারি উদ্যোগ। ফলে কৃষকের স্বল্প খরচে ফসল উৎপাদনে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। অনেকেই সরকারি ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি পেয়েছে। তবে ধান রোপনের ও কর্তনের মেশিনের সহজলভ্যতা না থাকায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে চাষিদের আগ্রহ থাকলেও তারা ব্যাপকভাবে চাষ করতে পারছে না।

পিলজঙ্গ ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিপুল পাল জানান, নওয়াপাড়া ব্লকে গত কয়েক বছর ধরে যান্ত্রিক পন্ধতিতে পানি সাশ্রয়ী প্রকল্পের মেশিন দিয়ে স্থানীয় চাষীদের চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অধিক লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় চাষীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে এ ব্লকে প্রায় ১৫ একর জমিতে যান্ত্রিক পন্ধতিতে ট্রে-তে উৎপাদিত ধানের চারা লাগানোর কাজ চলছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাছরুত মিল্লাত বলেন, এ উপজেলায় ৮ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশিক্ষিত চাষিরা চলতি মৌশুমে ধানের চারার পাশাপাশি সবজির চারা অনেকেই ট্রে-তে উৎপাদন করছে। বৈরি আবহাওয়া মোকাবেলা করে ফসল উৎপাদনে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, করোনাকালীন সময়ে শ্রমিক স্বল্পতার মধ্যে উৎপাদন সচল রাখতে বিভিন্ন সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। ফলে ফকিরহাটে কৃষি উৎপাদন অব্যহত আছে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার কৃষক পর্যায়ে এখন ২৯টি রিপার যন্ত্র, ২টি অটো রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ১০টি থ্রেসার যন্ত্র এবং একটি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার যন্ত্র রয়েছে। এতে কৃষকেরা কম খরচে ফসল উৎপাদন করে অধিক লাভবান হতে পারছেন।

এনএফ৭১/এমএ/২০২২

 

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top